
ছবি: সংগৃহীত
দেশের অর্থনীতিতে বড় ধস নেমেছে উপকরণ আমদানির তীব্র ঘাটতির কারণে। কৃষি, শিল্প ও অবকাঠামো খাতের প্রধান কাঁচামাল—ডিজেল, ফার্নেস অয়েল, সিমেন্ট, ক্লিংকার, বিটুমিন ও পাথরের আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর ফলে কৃষিজ উৎপাদন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অবকাঠামো প্রকল্পগুলিও ধীর গতিতে এগোচ্ছে। অর্থনীতির চাকা থমকে যাওয়ায় কর্মসংস্থান হ্রাস, বিনিয়োগ স্থবিরতা এবং রাজস্ব ঘাটতির মতো বহুমাত্রিক সমস্যা তৈরি হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২৫) হাই স্পিড ডিজেলের আমদানি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৩৬ লাখ ১৩ হাজার মেট্রিক টন, এবার তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮ লাখ ৮২ হাজার টনে। একই সময়ে ফার্নেস অয়েলের আমদানি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ, বিটুমিন কমেছে ২২ শতাংশ এবং পাথর আমদানি কমেছে ১৬ শতাংশ। সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকারও কম এসেছে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি উপকরণ কমে যাওয়া মানে শিল্প খাতের উৎপাদন কমে যাওয়া, যা সরাসরি জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে ধাক্কা দিচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. ফারুকুল ইসলাম বলেন, “ডিজেল শুধু পরিবহন নয়, কৃষি ও শিল্পের প্রাণ। আমদানি কমা মানে ব্যবহার কমা। ব্যবহার কমা মানে উৎপাদন ও বিনিয়োগে পতন। রাজস্ব আদায়ও তাই কমছে।”
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। বাজেট বাস্তবায়ন ব্যাহত হওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ঝুলে যাচ্ছে। ফলে এডিপি বাস্তবায়নের হার নেমে এসেছে ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন, মাত্র ৬৭.৮৫ শতাংশে।
শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকার মুদ্রা সংকোচন নীতি ও ডলার সংকটের কারণে অনেক প্রকল্পে অর্থ ছাড় করতে পারছে না। প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, “নতুন প্রকল্প না হলে সিমেন্ট ক্লিংকারের চাহিদা কমবেই। সরকারকে দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সচল করতে হবে।”
অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ মনে করেন, “ডিজেল আমদানির এই পতন আসলে সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্রকে প্রকাশ করছে। শিল্প, সেবা ও কৃষি—সবখানেই স্থবিরতা। বিনিয়োগ নেই, নতুন কর্মসংস্থান নেই। এভাবে চলতে থাকলে প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে।”
বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি নীতিতে স্বচ্ছতা, ডলার সংকট সমাধান ও উন্নয়ন প্রকল্পে গতি ফিরিয়ে আনাই এখন জরুরি। নইলে অর্থনীতির চাকায় এই ধীরগতি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ