
ছবি: সংগৃহীত
ওমরাহ—ইসলামে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি ইবাদত। জীবনে অন্তত একবার আল্লাহর ঘরে গিয়ে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের বাসনা অনেক মুসলমানেরই থাকে। তবে প্রশ্ন ওঠে, যদি কারও ওপর ঋণের বোঝা থাকে, তখন কি ওমরাহ আদায় হবে? অথবা আদায় হলেও সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক হবে কি না?
এই প্রশ্ন আজকাল অনেকেই করছেন। বিশেষ করে যখন কারও ব্যক্তিগত ঋণ রয়েছে, তখন তার পক্ষে ওমরাহর খরচ বহন করা কতটা সঙ্গত, তা নিয়ে দেখা দেয় দ্বিধা। এ প্রসঙ্গে ইসলামি পণ্ডিতদের ব্যাখ্যা এবং হাদিসের নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
ঋণের পরিমাণ ও ওমরাহর সামর্থ্য—কী বলছে শরিয়াহ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ঋণগ্রহীতার হাতে এমন পরিমাণ অর্থ থাকে যে ওমরাহ করার পরও সহজে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন, অথবা যদি পাওনাদার ঋণ পরিশোধে সময় দেন, তাহলে ওমরাহ করা জায়েজ হবে। তবে এই ক্ষেত্রে অবশ্যই শর্ত হলো—ঋণ শোধে যেন বিলম্ব না হয়, বা তা যেন কষ্টকর হয়ে না দাঁড়ায়।
কিন্তু যদি ঋণ পরিশোধে সমস্যা হয়?
তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে স্পষ্ট নির্দেশনা হলো—প্রথমে ঋণ পরিশোধ করাই ফরজ এবং অগ্রাধিকারযোগ্য। ওমরাহ মুস্তাহাব আমল হলেও ঋণ পরিশোধ একটি ওয়াজিব দায়িত্ব, যা আল্লাহর কাছে চরম গুরুত্ব বহন করে।
প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সময়ক্ষেপণ করে, সে একজন জুলুমকারী।”
(সহিহ মুসলিম: হাদিস ৩৮৫৬)
এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে বলা হয়েছে— “শহীদও ঋণের কারণে জান্নাতে প্রবেশে বাধা পাবে, যতক্ষণ না সে তার ঋণ পরিশোধ করে।” (মুসলিম ও তিরমিজি)
তাহলে ঋণ রেখে ওমরাহ করলে কি আদায় হবে না?
আদায় হবে—তবে সেটা ‘ফজিলতের আমল’ হিসেবে গণ্য হবে, নফল হিসেবে। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মানুষের দায়িত্ব আগে তার ওপর থাকা ফরজ বা বাধ্যতামূলক দায়িত্ব আদায় করা। অর্থাৎ, কারও যদি ওমরাহ করার কারণে পরিবারের হক বঞ্চিত হয় বা ঋণদাতার পাওনা সময়মতো পরিশোধ না হয়, তাহলে সে ওমরাহতে ফজিলত অর্জন করতে পারলেও গুনাহ থেকে মুক্ত নয়।
ইসলাম কী শিক্ষা দেয় এই পরিস্থিতিতে?
ইসলাম একটি ভারসাম্যের ধর্ম। এখানে আবেগ নয়, বাস্তবতাই বিবেচনায় আনা হয়। তাই যারা ওমরাহ করতে চান অথচ ঋণের দায়ে আছেন, তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ করণীয় হলো—
প্রথমে ঋণ শোধ করা, এরপর সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর ঘর জিয়ারতে যাওয়া।
ওমরাহ অবশ্যই পুণ্যের পথ। তবে ঋণগ্রস্ত হয়ে ওমরাহ করলে দায়িত্ব এড়ানো যায় না। বরং পরকালীন জবাবদিহিতে সেটি হয়ে উঠতে পারে চরম বিপদের কারণ।
তাই ইসলামের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে সবচেয়ে উত্তম পথ—প্রথমে ঋণ, পরে ইবাদতের স্বপ্ন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ