
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার হচ্ছে। এ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী ভোটার সংখ্যা প্রায় পৌনে ১৩ কোটি ছুঁইছুঁই, যা আগের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তুলনায় লক্ষণীয় বৃদ্ধি। ভোটারের সংখ্যার এই বর্ধিত হওয়ায় নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় ৪৫ হাজার, যা আগের নির্বাচনের তুলনায় প্রায় পৌনে ৩ হাজার কেন্দ্র বেশি।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুসারে, ২০২৫ সালের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১২ কোটি ৭৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯৮৩ জন। এর আগে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার ৩৭৪ জন। গত নির্বাচনে ভোটারদের ভোট প্রদান কার্যক্রমে মোট ৪২ হাজার ১৪৮টি ভোটকেন্দ্র ব্যবহৃত হয়েছিল। কিন্তু ভোটার বৃদ্ধি ও নিরাপত্তার কারণে এবার ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৪৪ হাজার ৯৩৪টি হতে পারে।
নির্বাচন কমিশন শিগগিরই ভোটার অনুপাতে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে একটি সমন্বয় সভার আয়োজন করবে, যেখানে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ ও কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত তালিকা এবং এর ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়েনের ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচন কমিশনের পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেগুলোতে ভোটকেন্দ্র রয়েছে বা হবে, সেগুলোর বাউন্ডারি বা সীমানা প্রাচীর অনেকে নেই, আবার কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা-জানালা অতীতের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। এসব জায়গার সংস্কার, মেরামত ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বিভাগসমূহকে নিজস্ব অর্থায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
ইসির উপসচিব দেওয়ান মো. সারওয়ার জাহান বলেন, “নির্বাচন সফল করতে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তাই ভোটকেন্দ্র বাড়ালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের সংখ্যাও বাড়বে।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আনসার বাহিনীর পাঁচ লাখ ১৬ হাজার সদস্য, কোস্টগার্ডের ২ হাজার ৩৫০ জন, বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন এবং পুলিশের (র্যাবসহ) ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন কর্মী নিয়োজিত ছিল। মোট নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন।
নিরাপত্তার জন্য ভোটকেন্দ্র প্রতি আনসারের জন্য ৬৩৭ থেকে এক হাজার টাকা, কোস্টগার্ডকে ৬৩৭ থেকে এক হাজার ৮২০ টাকা, বিজিবিকে ৪০০ থেকে এক হাজার ২২৫ টাকা এবং পুলিশ সদস্যদের ৪০০ থেকে এক হাজার ৬০৬ টাকা জনপ্রতি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এবার ভোটকেন্দ্র বৃদ্ধির কারণে নির্বাচন পরিচালনার খরচও বাড়বে এবং তা বরাদ্দ থেকে বহন করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটার ও ভোটকেন্দ্র বৃদ্ধির সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব আরও জটিল হবে। তাই সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে আরো প্রস্তুত ও সচেতন থাকতে হবে যাতে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়।
সরকার ও নির্বাচন কমিশনও ভোটার সুবিধা ও নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ নজর দিচ্ছে। আগামী নির্বাচনের জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে তারা একযোগে কাজ করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ