
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তের মুখে পড়া কয়েকজন বাংলাদেশি ধনকুবের যুক্তরাজ্যে তাদের সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর ও পুনঃঅর্থায়ন করছেন। যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ের তথ্য ও গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গত এক বছরে এসব ধনকুবেরের নামে অন্তত ২০টি সম্পত্তি লেনদেনের আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, এবং বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান ও তার পরিবারের মালিকানাধীন সম্পত্তি রয়েছে।
দুদক ও বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যেই এসব সম্পত্তি জব্দের জন্য যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে (এনসিএ) সহযোগিতার আবেদন করেছে। গত মে-জুনে এনসিএ এ ধরনের সম্পত্তি জব্দ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে সালমান এফ রহমান পরিবারের ৯ কোটি পাউন্ড এবং সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭ কোটি পাউন্ডের বেশি মূল্যের সম্পত্তি।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এই সম্পত্তিগুলো যেন জব্দ করা হয় এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ফেরত আনা হয়, সেই আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে একদিকে এর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সমালোচনা রয়েছে এবং অন্যদিকে এর পেছনে আইনি জটিলতা ও লেনদেনের গোপনীয়তা বিষয়ক প্রশ্ন উঠেছে।
দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে তদন্তে যেসব সম্পত্তি স্থানান্তর বা বিক্রি হচ্ছে, তা সন্দেহজনক এবং দ্রুত তদন্ত প্রয়োজন।” তিনি আরও বলেন, “যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে এসব লেনদেনের পেছনে কিছু আইনি ফাঁকফোকর রয়েছে যা ব্যবহার করা হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের লেনদেন দ্রুত সম্পাদিত হলে সম্পদ আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থায় বিলীন হয়ে যেতে পারে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের পলিসি ডিরেক্টর ড্যানকান হেমস বলেছেন, “সরকারগুলোকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে এ ধরনের সন্দেহজনক সম্পত্তি লেনদেন আটকানো যায়।”
যুক্তরাজ্যের এমপি জো পাওয়েল বলেন, “তদন্ত দ্রুত ও গভীর হতে হবে, অন্যথায় সন্দেহভাজন সম্পদ দ্রুত নষ্ট বা বিক্রি হয়ে যাবে।”
অপর দিকে, ধনকুবেরদের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে যে, তারা রাজনৈতিক কারণে হয়রানির শিকার এবং তদন্তে সহযোগিতা করবে।
বর্তমানে ঢাকা ও লন্ডন থেকে তদন্ত চলছে। দুদক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও যুক্তরাজ্যের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যৌথভাবে সম্পত্তি জব্দ, অর্থ পাচারের মূল উৎস উদঘাটন এবং সম্পদের যথাযথ ফেরত আনার জন্য কাজ করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আর্থিক দুর্নীতি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এ সময় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা প্রয়োজন যাতে রাজনীতির ছায়া না পড়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ