
ছবি: সংগৃহীত
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবারও বড় পরিমাণ স্বর্ণ চোরাচালান ঠেকালো এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। আজ শনিবার (১৯ জুলাই ২০২৫ খ্রি.) সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে বিমানবন্দরের আগমনী গেটের ০১ ও ০২ নম্বর ক্যানোপির মাঝামাঝি এলাকা থেকে সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে আটক করে চোরাচালান রোধে নিয়োজিত বিশেষ ফোর্সটি। আটক দুইজনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় দেড় কেজি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা।
আটককৃতদের নাম মোঃ শরীফুল আলম (৩০) এবং মোঃ জুবায়ের (৩৬)। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা প্রাইভেটকার স্টার্ট দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও, এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দ্রুত কৌশলে তাদের গাড়ি থামিয়ে আটক করতে সক্ষম হন। গাড়িটি ছিল একটি সিলভার রঙের প্রাইভেট কার, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৫২৫৪।
পরে গাড়ির ভেতরে তল্লাশি চালিয়ে তাদের আসনের মাঝখানে থাকা টুলবক্স থেকে উদ্ধার করা হয় মোট ১৩টি কফি কালারের ছোট ব্যাগ। এসব ব্যাগেই ছিল স্বর্ণালঙ্কার। জব্দ তালিকা অনুযায়ী, মোট ১৫৭৭ গ্রাম (প্রায় ১.৬ কেজি) ওজনের ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত শরীফুল ও জুবায়ের স্বীকার করেছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরের একটি সুসংগঠিত স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তাদের ভূমিকা ছিল চোরাচালানের 'রিসিভার' বা গ্রহণকারী হিসেবে। তারা জানিয়েছেন, এই স্বর্ণালঙ্কারগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে অজ্ঞাতনামা যাত্রীদের মাধ্যমে অবৈধভাবে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় তারা সরকারকে বিপুল রাজস্ব হারাতে বাধ্য করেছে।
উদ্ধারকৃত স্বর্ণালঙ্কারগুলো জব্দ করে, ধৃত দুইজনের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় শনিবার সন্ধ্যায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ এর ২৫বি(১)(বি)/২৫-ডি ধারায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, তারা পরস্পর যোগসাজশে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে, অবৈধ পথে স্বর্ণ দেশে আনায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (১৩)-এর অপারেশনাল কমান্ডার, পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, “নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিমানবন্দর এলাকায় চোরাচালান রোধে এয়ারপোর্ট এপিবিএন সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্বর্ণ চোরাচালানের হার বাড়ছে, তবে আমরা সতর্ক। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের যেকোনো ধরনের চোরাচালান কার্যক্রম রোধে আমাদের ইউনিট প্রস্তুত এবং সচেষ্ট।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের চক্রের অন্য সদস্যদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারে তৎপরতা চলছে। পাশাপাশি, বিমানবন্দর এলাকায় নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে। আগত যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশি, গাড়ি স্ক্যানিং এবং সন্দেহভাজন গতিবিধি নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চোরাচালান শিকড়সহ বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালান একটি চলমান সমস্যা হলেও, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা ও কার্যকরী পদক্ষেপে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে। চোরাচালান সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এসজে