
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ডেমোক্রেটিক দলের অন্যতম প্রবীণ নেতা জো বাইডেন প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। তার দেহে ধরা পড়েছে ক্যানসারের একটি আক্রমণাত্মক রূপ, যা হাড়েও ছড়িয়ে পড়েছে বলে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন। এই খবর প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ২০২4 সালের নির্বাচনের পর রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানো বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে যেসব গুঞ্জন চলছিল, তা নতুন মাত্রা পেয়েছে।
৮২ বছর বয়সী বাইডেন বর্তমানে ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটন শহরে তার নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে তার পরিবার মিলে চিকিৎসা-সংক্রান্ত বিভিন্ন পথ পর্যালোচনা করছেন বলে জানানো হয়েছে। রোববার (১৮ মে) বাইডেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “গত সপ্তাহে বাইডেন প্রস্রাবের স্বাভাবিক গতিপথে কিছু পরিবর্তন এবং অস্বস্তি অনুভব করায় তার প্রোস্টেট পরীক্ষা করা হয়। এরপর শুক্রবার তার দেহে প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত হয়, যা গ্লিসন স্কোর ৯ (গ্রেড গ্রুপ ৫) এবং হাড়ে মেটাস্ট্যাসিসসহ একটি আক্রমণাত্মক রূপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”
গ্লিসন স্কোর ৯ মানে হলো, এটি সবচেয়ে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও আগ্রাসী ধরনের ক্যানসার, যা দ্রুত বিস্তার লাভ করতে পারে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এমন ক্যানসারের ক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা না দিলে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
তবে আশার কথা হলো, বাইডেনের ক্ষেত্রে ক্যানসারটি "হরমোন-সংবেদনশীল" বা "হরমোন রিসপনসিভ" ধরনের হতে পারে, যা আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে তুলনামূলক সহজে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা হরমোন থেরাপি এবং সম্ভাব্য রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপির কথাও বিবেচনা করছেন। বর্তমানে বাইডেন ও তার পরিবার সেসব চিকিৎসা পন্থা পর্যালোচনা করছেন, যা তার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে।
স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বাইডেন কিছুটা নিস্তেজ এবং কম সক্রিয় ছিলেন, যা অনেকের নজরে পড়ে। এরপর বাইডেনের ঘনিষ্ঠ একজন মুখপাত্র গত সপ্তাহে প্রথম জানান, সাবেক এই প্রেসিডেন্টের প্রোস্টেটে একটি ‘ছোট নোডিউল’ পাওয়া গেছে। নোডিউল শনাক্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই ক্যানসার ধরা পড়ে।
বিশ্বজুড়ে নানা রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টের এমন স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি কূটনৈতিক পরিমণ্ডলেও এক ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বাইডেন, যিনি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান, তিনি এখনও ডেমোক্রেটিক দলের প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত।
বাইডেনের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতা থাকলেও, এধরনের মারাত্মক ক্যানসার আগে কখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তিনি ১৯৮৮ সালে দুটি বড় ব্রেইন অ্যানিউরিজম সার্জারি করেছিলেন, তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে বারবার প্রশ্ন উঠেছে।
বর্তমানে বাইডেনের চিকিৎসা ও সুস্থতার বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য সামনে আসার অপেক্ষায় রয়েছে দেশটির জনসাধারণ ও গণমাধ্যম। হোয়াইট হাউজ কিংবা ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, বাইডেনের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি এখন তার ব্যক্তিগত বিষয় থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। যদি তার ক্যানসার আরও জটিল বা অনিয়ন্ত্রিত আকার ধারণ করে, তবে তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
সূত্র: সিএনএন
বাংলাবার্তা/এমএইচ