
চিত্র নায়িকা মৌসুমি
সালমান শাহ শুধুই সহশিল্পী ছিলেন না প্রিয়দর্শিনী চিত্রনায়িকা মৌসুমীর কাছে। তারা ছিলেন ভালো বন্ধু, বাল্যকাল থেকেই বন্ধুত্ব। এমন একজন মানুষকে অকালে হারানোর বেদনা কোনো দিন ভোলার নয়।
প্রথম চলচ্চিত্র ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ থেকেই আপনার আর সালমান শাহর জুটি সুপারহিট। প্রথম ছবির অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সিনেমায় আসার আগে আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী নির্বাচিত হয়ে মডেলিং শুরু করি। তখন থেকেই আমার ছবির প্রস্তাবগুলো আসত গুলজার (পরিচালক মুশফিকুর রহমান) ভাইয়ের মাধ্যমে। মধ্যবিত্ত পরিবার, তাই নাটকে পর্যন্ত অভিনয়ের চেষ্টা করিনি। চলচ্চিত্র তো দূরের কথা। গুলজার ভাই সাংবাদিকতা করতেন। সাক্ষাৎকার নিতে একদিন ঢাকায় আমাদের মোহাম্মদপুরে হুমায়ুন রোডের বাসায় এসেছিলেন, সঙ্গে এসেছিলেন সোহানুর রহমান সোহান ভাই। গুলজার ভাই বললেন, ‘হিন্দি ছবি কেয়ামত সে কেয়ামত তক যদি বাংলায় রিমেক হয়, আপনি জুহি চাওলার চরিত্রটা করবেন, আমির খানের চরিত্রে নোবেল, তৌকীর আহমেদ কিংবা জাহিদ হাসানও হতে পারেন।’ তারা জানতেন, তৌকীর ভাই আর নোবেল ভাইয়ের ভক্ত আমি। তখন কিছুটা আগ্রহী হলাম। পরে তো ইমনকে (সালমান শাহর ডাকনাম) নির্বাচন করা হলো। শুটিংয়ের আগে নায়ক-নায়িকার সাক্ষাৎপর্বেই তার সঙ্গে আমার প্রথম দেখা। কথায় কথায় বুঝতে পারলাম এটাই আমাদের প্রথম দেখা নয়। ছোটবেলায় খুলনায় একসঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। তখন থেকেই আমরা বন্ধু। কাজ করতে গিয়ে আমরা আবার বন্ধু হয়ে যাই। প্রথম দিন ক্যামেরার সামনে ভয়ে কাঁপছিলাম আমরা। একটি দৃশ্য ছিল, ওই দিন একটা বাইকে সালমান আর আমি এফডিসি থেকে কাঁচপুরে গেছি। আবার ফিরে আসি। ছবিতে পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য ছিল ওটা। আজ ৩০ বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু কেয়ামত থেকে কেয়ামত, সালমান শাহ, কিংবা সালমান-মৌসুমী জুটির কিছুই পুরনো হয়নি। শুধু সালমান আমাদের মাঝে নেই। এটাই হয়তো ভাগ্যে ছিল। জানি না অন্য কোনো ছবি দিয়ে আসলে আমার অভিষেকটা এমন হতো কি না। বাকিটা তো ইতিহাস।
‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ এতটা সাড়া ফেলবে, ভেবেছিলেন কি?
এটা যে প্রেমের আদর্শ গল্প হয়ে যাবে, এই জুটি যে প্রেমের আদর্শ জুটি হবে, প্রিয় জুটি হয়ে উঠবে, ভাবিনি। এত বড় স্বপ্ন মানুষ দেখতে পারে না। যখন পেছনে ফিরে তাকাই, দেখা যায়, এই স্বপ্ন যদি দেখতাম, তাহলে স্বপ্ন দেখেই মারা যেতাম। ৩০ বছর সমানতালে জনপ্রিয় থাকবে একটা ছবি, আমাকে ‘কয়ামত-কন্যা’ ডাকবে! এখনো সালমান মানে আমি, আমি মানে সালমান, অথবা কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির প্রতিটি গান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে স্পর্শ করবে, এসব ভাবার মতো শক্তি আল্লাহ দেননি। এটা তার দান। এটা মানুষ কখনো সৃষ্টি করতে পারে না।
সামলান শাহর অকাল প্রয়াণে ক্যারিয়ারে কোনো অসুবিধা হয়েছিল?
সালমান শাহর সঙ্গে আমার জুটিকে মনে করি ‘এভারগ্রিন’। এমন জুটি যখন ভেঙে যায় তা-ও তার অকাল প্রয়াণে, তখন ক্যারিয়ারের কী সমস্যা হলো তার চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায় আত্মার মানুষকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট। আর ক্যারিয়ারের কথা বললে, অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে তার অকালপ্রয়াণে আমাকে আবারও নতুন করে ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে হয়েছে। সব ওভারকাম করে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সময় লেগেছে। সে থাকলে নিঃসন্দেহে আরও দারুণ দারুণ ছবি হয়তো একসঙ্গে দর্শকদের উপহার দিতে পারতাম। তবে আমি এটাও বিশ্বাস করি, আমার ভাগ্যে যতটুকু লেখা আছে, ঠিক ততটুকুই আমি পাব। এ জন্য কোনো আফসোস নেই, তবে তাকে হারানোর কষ্ট অবশ্যই রয়ে গেছে। তাকে আমার প্রায়ই মনে পড়ে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, সে যেখানে থাকুক না কেন, এই পৃথিবীতে যেমন সব সময় আনন্দ, হাসি, আড্ডায় জীবনটা ভরিয়ে রেখেছিল, এখনো যেন তেমনি থাকে।