
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে আশঙ্কাজনক হারে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হার কমেছে, যা বিগত ১৬ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই নিম্নমুখী ফলাফলের কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রাপ্ত নম্বরের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য ব্যাপক সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে। শুধু ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এই বছর মোট ৯২ হাজার ৮৬৩ জন শিক্ষার্থী ২ লাখ ২৩ হাজার ৬৬৪টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করেছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২১ হাজার বেশি।
এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের জন্য পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করার সুযোগ ১১ জুলাই থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ছিল। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের নিয়ম অনুযায়ী, ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক। ফলে ২০২৫ সালের পুনঃনিরীক্ষণের ফল আগামী ১০ আগস্টের মধ্যে প্রকাশিত হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, পুনর্নিরীক্ষণের জন্য সব আবেদনপত্রের খাতা পর্যালোচনা করা হবে। খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট কোনো নির্দিষ্ট ফলাফল প্রকাশের তারিখ এখনও চূড়ান্ত হয়নি, তবে শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে। যেসব শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তিত হবে, তাদেরকে এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করা হবে এবং সংশোধিত ফলাফল বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন মূলত গণিত বিষয়ে সবচেয়ে বেশি, যার সংখ্যা ৪২ হাজার ৯৩৬টি। ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে মোট ৩৯ হাজার ৩৭৬টি আবেদন হয়েছে, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এরপর পদার্থবিজ্ঞান এবং বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে যথাক্রমে ১৬ হাজার ২৩৩ ও ১৩ হাজার ৫৫৮টি আবেদন এসেছে। সবচেয়ে কম আবেদন এসেছে চারু ও কারুকলা বিষয়ে, মাত্র ৬টি।
পুনর্নিরীক্ষণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পুনর্নিরীক্ষণ কেবল উত্তরের পুনর্মূল্যায়ন নয়। এতে চারটি প্রধান বিষয় খতিয়ে দেখা হয়:
১. প্রশ্নপত্রের প্রতিটি উত্তরে নম্বর সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে কি না,
২. নম্বর গণনায় কোনো ভুল হয়েছে কি না,
৩. নম্বর ওএমআর শিটে সঠিকভাবে এন্ট্রি করা হয়েছে কি না,
৪. ওএমআর শিটের বৃত্ত সঠিকভাবে ভরাট হয়েছে কি না।
এই চারটি ক্ষেত্রের যেকোনো একটি ক্ষেত্রে যদি ভুল পাওয়া যায়, তবে তা সংশোধন করে নতুন ফলাফল প্রকাশ করা হয়। তবে পুনর্নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন করে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় না বা নতুন নম্বর দেওয়া হয় না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসএসসির এই ফলাফল ও পুনর্নিরীক্ষণের রেকর্ডসংখ্যক আবেদন দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য সতর্ক সংকেত। তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, ফলাফলের ওপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়ে শিক্ষার্থীদের মনোবল বজায় রেখে শিক্ষা নীতিতে গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে।
পরবর্তী সময়ে শিক্ষাবোর্ডগুলো আরও স্বচ্ছতা বজায় রেখে দ্রুত এবং নির্ভুল ফলাফল প্রকাশের ব্যবস্থা নেবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যাতে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে তাদের শিক্ষাজীবন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ