
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে স্বর্ণের দাম। এতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় স্বর্ণ যে কোনো সময় দাম বেড়ে রেকর্ড গড়তে পারে দেশের বাজারেও। অন্যদিকে দাম বেড়ে বিশ্ববাজারে সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে রুপাও।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩১৬ দশমিক ৯৯ ডলারে, যা সেশনের শুরুতে পৌঁছেছিল রেকর্ড ৪ হাজার ৩১৮ দশমিক ৭৫ ডলারে। একই সময়ে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য মার্কিন স্বর্ণের ফিউচার ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ৩০৪ দশমিক ৬০ ডলারে স্থিত হয়েছে, যা ৪ হাজার ৩৩৫ ডলারের রেকর্ড সর্বোচ্চ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে স্বর্ণের দিকে ঠেলে দিয়েছে, পাশাপাশি চলতি মাসে ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশাও দাম বাড়াতে ভূমিকা রেখেছে। মার্কেটপালস বাই ওএএনডিএ-এর বিশ্লেষক জেইন ভাওদা বলেন, ‘স্বর্ণের দাম নির্ভর করবে ২০২৬ সালের দিকে সুদের হার কমানোর পরিস্থিতি এবং মার্কিন-চীন সম্পর্কের উপর। যদি চুক্তি না হয় এবং উত্তেজনা অব্যাহত থাকে, তাহলে স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ডলার প্রতি আউন্স অতিক্রম করতে পারে।’
চলতি সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা মার্কিন-চীন বাণিজ্য বিরোধের দিকে নজর দিয়েছেন। বুধবার (১৫ অক্টোবর) ওয়াশিংটন চীনের বর্ধিত বিরল মাটির রফতানি নিয়ন্ত্রণকে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের জন্য হুমকি হিসেবে সমালোচনা করেছে। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ও রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ সমাধানের জন্য আরেকটি শীর্ষ সম্মেলনে আলোচনা করবেন।
ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, সুদের হার কমানোর আগ্রহ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয়, ডলারের বিমুদ্রাকরণ এবং শক্তিশালী ইটিএফ প্রবাহের কারণে স্বর্ণের দাম গত বছর থেকে ৬০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। বাজারে ব্যবসায়ীরা অক্টোবরে ফেডারেল রিজার্ভের ২৫ বেসিস-পয়েন্ট হার কমানোর পরিকল্পনা করছেন এবং ডিসেম্বরে আরও একটি হার কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে, যার সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৮ শতাংশ এবং ৯৫ শতাংশ। স্বর্ণ সাধারণত কম সুদের হারের পরিবেশে ভালো ফলাফল করে। ভাওদা বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদে স্বর্ণের দাম কিছুটা কমতে পারে, তবে তা অস্থায়ী হবে কারণ বিনিয়োগকারীরা আবার অবস্থান নিতে প্রস্তুত থাকবেন।’
বুধবার এইচএসবিসি তাদের ২০২৫ সালের গড় স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ৩৫৫ ডলারে পুনর্নির্ধারণ করেছে, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দুর্বল মার্কিন ডলারের কারণে নিরাপদ আশ্রয়স্থলের চাহিদা উল্লেখ করে। একই সঙ্গে, চলমান মার্কিন সরকারি অচলাবস্থার কারণে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তথ্য স্থগিত রয়েছে, যা প্রতি সপ্তাহে ১৫ বিলিয়ন ডলার উৎপাদন হ্রাস করতে পারে বলে একটি ট্রেজারি কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন।
বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও আরও বাড়তে পারে স্বর্ণের দাম। বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে এর প্রভাব পড়ে দেশের বাজারেও। তাই যে কোনো সময় দেশের বাজারেও দাম বাড়ানো হতে পারে।
সবশেষ গত ১৪ অক্টোবর রাতে দেয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন। সেদিন ভরিতে ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়িয়েছে সংগঠনটি। নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা। যা দেশের ইতিহাসে এক ভরি মূল্যবান এই ধাতুর সর্বোচ্চ দাম।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা ও ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ টাকায়। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে।
এদিকে, বিশ্ববাজারে স্পট রুপার দাম ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৫৪ দশমিক ৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে, সেশনের শুরুতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৫৪ দশমিক ১৫ ডলার স্পর্শ করেছিল। প্লাটিনামের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৭০৬ দশমিক ৬৫ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৬০৬ ডলার হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ