
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও ইলেকট্রনিকস শিল্পের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন এবার দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে নতুন অধ্যায় রচনা করল। দীর্ঘদিন ধরে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে বিভিন্ন খেলার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যুক্ত থাকার পর এবার তারা সরাসরি যুক্ত হয়েছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল দল—আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের সঙ্গে। বিশ্বের অন্যতম সফল এই দলের অফিশিয়াল রিজিওনাল স্পন্সর হিসেবে ওয়ালটন এক বছরের জন্য আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সঙ্গে।
আজ শুক্রবার এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওয়ালটন এবং এএফএ আনুষ্ঠানিকভাবে এই চুক্তির ঘোষণা দেয়। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে গত সপ্তাহে, যা আজ সকালে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। সেখানে ওয়ালটনের নাম ও লোগোকে আর্জেন্টিনার অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্পন্সরদের সারিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে দেখা যায়, ওয়ালটনের আধুনিক কারখানার ভেতরে আর্জেন্টিনা দলের তারকা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি, হুলিয়ান আলভারেজ, এমিলিয়ানো মার্টিনেজ প্রমুখের ছবি ব্যবহৃত হয়েছে ব্র্যান্ডিং ভিজ্যুয়ালে।
এএফএর সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া এই পার্টনারশিপ প্রসঙ্গে বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, সমর্থন ও আবেগ আমরা বহুবার অনুভব করেছি—বিশেষ করে বিশ্বকাপের সময়। ওয়ালটনের মতো উদ্ভাবনী এবং প্রভাবশালী একটি ব্র্যান্ডকে আমাদের আঞ্চলিক স্পন্সর হিসেবে পেয়ে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এই অংশীদারিত্ব দুই দেশের মানুষের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও ফুটবলপ্রেমকে আরও গভীর করবে।”
বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের জনপ্রিয়তা নতুন কিছু নয়। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে দলটির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের ভালোবাসা এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আর্জেন্টিনার পতাকা ও মেসির জার্সিতে ভরে গিয়েছিল শহর-গ্রাম। এই পটভূমিতেই ওয়ালটনের এই স্পন্সরশিপকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ওয়ালটনের চিফ মার্কেটিং অফিসার (সিএমও) জোহেব আহমেদ বলেন, “বাংলাদেশে ফুটবল মানেই এক উৎসব। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার ফুটবল—বিশেষত আর্জেন্টিনা দলকে ঘিরে মানুষের উন্মাদনা অতুলনীয়। আমরা বিশ্বাস করি, এই চুক্তির মাধ্যমে ওয়ালটন বাংলাদেশের কোটি ভক্তের কাছে আর্জেন্টিনার সঙ্গে এক নতুন সেতুবন্ধন গড়ে তুলবে। আমাদের ব্র্যান্ডের পণ্যে এখন মেসি ও তার সতীর্থদের ছবি বা চিহ্ন দেখা যাবে—যা বাংলাদেশের আর্জেন্টিনা সমর্থকদের জন্য গর্বের বিষয় হবে।”
ওয়ালটন ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ৪০টিরও বেশি দেশে রপ্তানি করছে ফ্রিজ, টেলিভিশন, এসি, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন হোম ও স্মার্ট ডিভাইস। আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সঙ্গে এই চুক্তি ওয়ালটনের ব্র্যান্ডিংয়ে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ওয়ালটনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (গ্লোবাল মার্কেট) মাহবুব রহমান টিপু বলেন, “এই অংশীদারিত্ব শুধু একটি চুক্তি নয়; এটি বাংলাদেশের জন্য এক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। আর্জেন্টিনা দলের মতো বৈশ্বিক আইকনের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ আমাদের পণ্য ও সেবা বিশ্ববাজারে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করবে।”
গত কয়েক দশক ধরেই বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দ্বৈরথ ফুটবল সমর্থকদের মধ্যে এক বিশেষ আবেগ তৈরি করেছে। বিশেষ করে ২০২২ সালের বিশ্বকাপজয়ী দলের নায়ক লিওনেল মেসিকে ঘিরে বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণের ভালোবাসা এখনো অটুট। এই আবেগকে আরও ঘনিষ্ঠ করতে ওয়ালটনের এই উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্রীড়া বিশ্লেষকরা বলছেন, আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সঙ্গে ওয়ালটনের স্পন্সরশিপ বাংলাদেশে ক্রীড়াবাজার ও কর্পোরেট স্পোর্টস মার্কেটিংয়ের নতুন দিক খুলে দেবে। এতে করে স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর জন্যও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের ব্র্যান্ড ইমেজ গড়ে তোলার নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি হলো।
চুক্তির অংশ হিসেবে আগামী এক বছর ওয়ালটনের টেলিভিশন, ফ্রিজ, এসি, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোনের বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও পণ্যে আর্জেন্টিনা দলের লোগো ও খেলোয়াড়দের ছবি ব্যবহৃত হবে। ওয়ালটন জানায়, তাদের ব্র্যান্ড ক্যাম্পেইনে ফুটবলভক্তদের জন্য বিশেষ অফার, কালেক্টরস এডিশন পণ্য ও প্রমোশনাল কার্যক্রমও চালু করা হবে।
ওয়ালটনের চেয়ারম্যান এসএম নুরুল আলম রেজা বলেন, “এটি শুধু একটি বাণিজ্যিক চুক্তি নয়, এটি বাংলাদেশের জন্য সম্মান ও গর্বের বিষয়। আমরা চাই, বাংলাদেশের পতাকার মতোই ওয়ালটনের নাম এখন আর্জেন্টিনার জার্সিতেও ছড়িয়ে পড়ুক।”
ওয়ালটন–আর্জেন্টিনা অংশীদারিত্ব কেবল এক বছরের একটি চুক্তি নয়, বরং এটি বাংলাদেশের কর্পোরেট ইতিহাসে এক অনন্য মাইলফলক। দেশের ব্র্যান্ড হিসেবে আর্জেন্টিনার মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতি, ক্রীড়া সংস্কৃতি ও আন্তর্জাতিক ইমেজ—সবকিছুর জন্যই এক ইতিবাচক বার্তা। এখন ওয়ালটনের পণ্যে যখন ফুটবল রাজা লিওনেল মেসির মুখ দেখা যাবে, তখন সেটি কেবল একটি প্রচারণা নয়, বরং বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমী জনতার আবেগ ও গর্বের প্রতীক হয়ে উঠবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ