ছবি: সংগৃহীত
নিজেদের ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই হয়ে লজ্জার এক পরিসমাপ্তি ঘটল বাংলাদেশের। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে গতি হারানোর পর এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা ছিল টাইগারদের। কিন্তু চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবারের ম্যাচেও ব্যর্থতার ধারাই অব্যাহত রাখল স্বাগতিকরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৫ উইকেটের ব্যবধানে পরাজয়ের ফলে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হলো ৩-০ তে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ সম্প্রতি বেশ উন্নতির ইঙ্গিত দিয়েছিল। সর্বশেষ চারটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজেই জয় এসেছিল সাকিব-লিটনদের হাতে। আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ধারাবাহিকভাবে জয়ের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঘরের মাঠে আত্মবিশ্বাসী ছিল দলটি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই সিরিজে ব্যাটিং, বোলিং কিংবা ফিল্ডিং—কোনো বিভাগেই নিজেদের ছাপ রাখতে পারেনি বাংলাদেশ।
ধবলধোলাই এড়াতে হলে চট্টগ্রামের ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প ছিল না। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতা আর অপ্রস্তুত বোলিং আক্রমণের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। তবে ইনিংসের শুরুতেই দলের টপ অর্ডার ব্যাটাররা একে একে ফিরে যান ড্রেসিংরুমে। অন্যপ্রান্তে একাই দাঁড়িয়ে থেকে লড়াই চালিয়ে যান তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম। এই ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস—৮৯ রান।
তানজিদের ইনিংসে ছিল নয়টি চমৎকার চার ও চারটি চোখ ধাঁধানো ছক্কা। তার ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ লড়াইয়ের পুঁজি পায়। কিন্তু অন্যপ্রান্তে কেউ তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আসে সাইফ হাসানের ব্যাট থেকে—২৩। বাকিরা একে একে ব্যর্থতার খাতায় নাম লেখান।
ফলাফল—২০ ওভার শেষে বাংলাদেশ থামে মাত্র ১৫১ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিলেন রোমারিও শেফার্ড। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিকটি তুলে নেন তিনি চট্টগ্রামেই। ১৭তম ওভারের শেষ বলে নুরুল হাসান সোহানকে ফিরিয়ে দেন। এরপর ইনিংসের শেষ ওভারে প্রথম দুই বলে তানজিদ তামিম ও শরীফুল ইসলামকে আউট করে হ্যাটট্রিকের কৃতিত্ব অর্জন করেন এই ক্যারিবীয় পেসার।
দুই ওভার মিলিয়ে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নেওয়া শেফার্ড ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশের ১৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না। মাত্র ৫২ রানে তারা হারায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। তখন মনে হচ্ছিল, হয়তো এবার কিছু একটা করে দেখাতে পারবে স্বাগতিকরা।
কিন্তু এরপরই দৃশ্যপট পাল্টে দেন আকিম অগুস্তে ও রোস্টন চেস। চতুর্থ উইকেটে তারা গড়ে তোলেন ৯১ রানের এক দুর্দান্ত জুটি, যা পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
অগুস্তে খেলেন ৫১ রান, আর চেস করেন ৫৭ রান। দুজনই তুলে নেন ফিফটি এবং কার্যত ম্যাচটিকে বাংলাদেশের নাগালের বাইরে নিয়ে যান।
বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র উজ্জ্বল দিক ছিলেন তরুণ লেগস্পিনার রিশাদ হোসেন। জয়ের জন্য যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার মাত্র ৯ রান, তখন এক ওভারে টানা চেস ও অগুস্তেকে ফিরিয়ে দেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে ফলাফল নির্ধারিত হয়ে গেছে।
রিশাদের বোলিং ফিগার ছিল ৪ ওভারে ৩ উইকেট, যা বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে উজ্জ্বল পারফরম্যান্স।
শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯ বল বাকি থাকতে জয় তুলে নেয় ৫ উইকেটে। এই জয়ে সিরিজ শেষ করে তারা ৩-০ ব্যবধানে।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এই পরাজয় কেবল একটি হার নয়, বরং আত্মসমালোচনার সুযোগও এনে দিয়েছে। হোয়াইটওয়াশের ফলে টি-টোয়েন্টিতে সাম্প্রতিক ধারাবাহিক সাফল্যের ধারা থেমে গেল।
বিশেষ করে ব্যাটিং বিভাগে ধারাবাহিক ব্যর্থতা, মাঝারি মানের ফিল্ডিং, এবং বোলিংয়ে পরিকল্পনার অভাব দলটিকে চরম ভোগাচ্ছে। চট্টগ্রাম টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থতার পর টি-টোয়েন্টিতেও একই চিত্র ফুটে উঠেছে।
ম্যাচশেষে দলের অন্তর্বর্তীকালীন কোচ বলেন, “আমরা কিছু জায়গায় উন্নতি দেখাতে পেরেছি, কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এক-দুইজন ব্যাটসম্যান ভালো করলেই দল জেতে না। বোলারদেরও শুরুতেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।”
অন্যদিকে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ দলের বর্তমান গঠন এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কৌশল পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে মিডল অর্ডার ও ডেথ ওভারের বোলিংয়ে অভিজ্ঞতার অভাবই সিরিজ হারার প্রধান কারণ বলে তারা মনে করছেন।
এখন টাইগারদের সামনে ব্যস্ত সূচি—আসন্ন এশিয়া কাপ এবং এরপর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই সিরিজ থেকে পাওয়া শিক্ষা কাজে লাগাতে না পারলে বড় মঞ্চে আবারও একই ভুলের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
তানজিদ তামিমের ইনিংস হয়তো কিছুটা সান্ত্বনা দিয়েছে, কিন্তু দলীয় পারফরম্যান্সে এখনও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে।
এক কথায়, চট্টগ্রামের এই পরাজয় শুধুমাত্র একটি ম্যাচ হার নয়—এটি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি, যেখানে ব্যাটিংয়ের ভরসা নেই, বোলিংয়ে ধার নেই, আর কৌশলে নেই স্থিরতা।
ধবলধোলাইয়ের এই দাগ মুছতে হলে এখনই সময় আত্মসমালোচনার, নতুন পরিকল্পনার এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



