ছবি: সংগৃহীত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। পাশাপাশি, ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতার নিয়মিত শিক্ষার্থীর সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের হয়রানি ও হামলায় প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকার অভিযোগ ওঠে। এর প্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আহ্বায়ক করা হয় আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার হোসেনকে।
তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শী, লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করে। কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখিত ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগ নেতার জুলাই-আগস্ট বিপ্লববিরোধী কার্যক্রমের তথ্য সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়। এরপর অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদন ও নোটিশের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে প্রশাসন কার্যক্রম গ্রহণ করে।
বরখাস্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর তালিকা
শিক্ষকরা:
-
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং: অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান
-
ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি: অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, ড. তপন কুমার জোদ্দার
-
অর্থনীতি: অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা
-
হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট: সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম
-
বাংলা: অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ, ড. রবিউল হোসেন
-
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি: অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন, ড. শেলীনা নাসরিন
-
ইংরেজি: অধ্যাপক ড. এ.এইচ.এম আক্তারুল ইসলাম, ড. মিয়া রাসিদুজ্জামান
-
ব্যবস্থাপনা: অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিন
-
আইন: অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল, ড. রেবা মণ্ডল
-
মার্কেটিং: সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক
-
ইংরেজি (সহযোগী): ড. আফরোজা বানু
-
আল-ফিকহ অ্যান্ড ল: অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন
-
ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট: সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান
-
কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং: সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন
কর্মকর্তা ও কর্মকর্তা-কর্মচারী:
-
প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখা: উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান, আব্দুল হান্নান
-
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর: সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমান
-
প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখা: উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা
-
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ: শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিন
-
ফার্মেসি বিভাগ: জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল)
-
আইসিটি সেল: প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস
-
অর্থ ও হিসাব বিভাগ: শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন
-
তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দফতর: উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন
তালিকায় রয়েছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, বাংলা, ইংরেজি, কম্পিউটার সায়েন্স, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, আইন, আরবি ভাষা ও সাহিত্য, সমাজকল্যাণ, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়াদের সনদ বাতিল করা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখিত সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ নেতার প্রত্যক্ষ ও পেছন থেকে আন্দোলন দমন কার্যক্রম বিষয়ক তথ্যের ভিত্তিতে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে অনেক উসকানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা ও একাডেমিক পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় শিক্ষার্থীদের প্রতি অযাচিত আচরণ ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা ও ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার লক্ষ্য ধরে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, বাকি উসকানিদাতা ও পেছনের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধেও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ শিক্ষাজীবন বজায় থাকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



