
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বর্তমানে ওয়ানডে ফরম্যাটে সংকটের মুখোমুখি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওয়ানডে দলের উত্থান চমকপ্রদ হলেও আফগানিস্তানের মতো তুলনামূলক নবীন দলের বিপক্ষে সিরিজে টানা হারের শঙ্কা বাংলাদেশের সামনে কেউকে অবহেল্য করা সম্ভব নয় এমন সংকট তৈরি করেছে। আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত দিবা-রাত্রির দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ নামছে সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে।
প্রথম ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেটে হেরে আফগানিস্তান ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে। এ অবস্থায় আজ হেরে গেলে আফগানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের হ্যাটট্রিক হারের সম্ভাবনা তৈরি হবে। এ পরিস্থিতিতে টাইগাররা চাইছেন প্রতিটি ব্যাট, প্রতিটি বল এবং প্রতিটি ফিল্ডিংকে গুরুত্ব দিয়ে খেলার।
বাংলাদেশের আফগানিস্তানের সঙ্গে ওয়ানডে রেকর্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রথম দুটি সিরিজ ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বাংলাদেশ জিতেছিল। কিন্তু গত দুই বছর ধরে ওয়ানডেতে আফগানিস্তান বাংলাদেশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে সর্বশেষ ছয়টি ওয়ানডে ম্যাচের পাঁচটিতে হেরেছে বাংলাদেশ। ফলে গত ১২ মাসে মাত্র দুটি ওয়ানডে জয় টাইগারদের।
এতে দলের পারফরম্যান্সের ধারাবাহিক অবনতি স্পষ্ট। বর্তমানে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ দশে নেমে গেছে। তবে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি অংশ নিতে হলে ২০২৭ সালের মার্চের র্যাংকিংয়ে শীর্ষ আটে থাকা আবশ্যক। তাই প্রতিটি ম্যাচের গুরুত্ব বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের ম্যাচে বাংলাদেশকে সিরিজে টিকে থাকার পাশাপাশি রেটিং পয়েন্ট বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে থাকা আফগানিস্তানকে হারাতে পারলে মঙ্গলবারের শেষ ম্যাচটি কার্যত অলিখিত ফাইনালে রূপ নেবে।
আগের ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং ভালো শুরুর পরও ২২১ রানের মধ্যে সীমিত হয়, যেখানে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাওহিদ হৃদয় ফিফটি পেলেও সময়মতো বড় ইনিংস গড়ে তুলতে পারেননি। সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও ছন্দে নেই। আফগান স্পিনারদের কাছে ১৬৮টি ডটবল খেলে ব্যাটাররা চাপের মুখে পড়েছেন।
প্রথম ওয়ানডেতে আফগান স্পিনার রশিদ খানের জাদুতে মিরাজ, জাকের আলী ও নুরুল হাসানকে এলবিডব্লু ফাঁদে ফেলা হয়। এছাড়া আজমত উল্লাহ ও ওমর জাইয়ের অলরাউন্ড নৈপুণ্য বাংলাদেশের বড় সংগ্রহ গড়ার সম্ভাবনা শেষ করে দেয়। এ কারণে আজকের ম্যাচে এই দুই খেলোয়াড়কে সঠিকভাবে সামলানোই সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে শুধুমাত্র ব্যাটিং নয়, বোলারদের পারফরম্যান্সও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাচের প্রতিটি ওভার এবং প্রতিটি ফিল্ডিং অ্যাকশনে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ও স্থিরতা পরীক্ষার মুখে। প্রতিটি উইকেট, প্রতিটি রান এবং প্রতিটি ডটবলই আজকের লড়াইয়ে সমীকরণ বদলাতে পারে।
বাংলাদেশ দলের কোচ ও ম্যানেজমেন্টও ব্যাটিং-ও-বোলিং সমন্বয়, ফিটনেস, মানসিক প্রস্তুতি এবং ম্যাচের মধ্যে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে আজকের ম্যাচে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে অধিনায়ক মিরাজের নেতৃত্ব, জাকের আলীর কৌশল এবং নুরুলের স্থিতিশীলতা নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ সিরিজ বাঁচাতে পারবে কি না।
সিরিজ বাঁচানোর লড়াইয়ে বাংলাদেশ আজ মাঠে নামেছে শুধুমাত্র একটি ম্যাচ নয়, বরং ওয়ানডে ভবিষ্যৎ রক্ষা করার জন্য। প্রতিটি বল, প্রতিটি ফিল্ডিং এবং প্রতিটি ব্যাটিং ইনিংসকে স্ট্র্যাটেজিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। আফগানিস্তানের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে বাংলাদেশের জন্য বিকল্প নেই, প্রতিটি খেলোয়াড়ের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে।
সারসংক্ষেপে, আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত দিবা-রাত্রির দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজে সমতা ফেরানো এবং ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেটিং পয়েন্ট অর্জন করা। টাইগারদের জন্য আজকের ম্যাচ শুধু জয় বা হার নয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ধারাবাহিকতার প্রশ্নের সমাধানও বটে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ