
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপের ম্যাচে বাংলাদেশ ফুটবল দল ৪-৩ গোলে হংকংয়ের কাছে হেরে স্বপ্নের জার্সি তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। ম্যাচটি শুরুটা স্বপ্নের মতো হলেও, শেষ পর্যন্ত একের পর এক ত্রুটিমূলক ভুলের ফলে বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায়। বাংলাদেশের সমর্থক এবং মাঠে উপস্থিত দর্শকরা প্রত্যাশা করেছিলেন, হামজা চৌধুরী, শমিত মোরসালিন এবং মোরসালিনের দাপটের মাধ্যমে এক অসাধারণ প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী হবেন। কিন্তু ঘটে গেল সেই উল্টোটা – স্বপ্নের শুরু, ভুলের ধারা, এবং চূড়ান্ত হারের তিক্ত বাস্তবতা।
ম্যাচের শুরুটা ছিল একেবারে মনোমুগ্ধকর। বাংলাদেশের মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী সরাসরি ফ্রি কিক থেকে গোল করে দলের জন্য লিড নিশ্চিত করেছিলেন। এই গোলটি বাংলাদেশ সচরাচর পায় না, তাই মাঠের সমস্ত দর্শক উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। প্রথমার্ধে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রমণধারা যথেষ্ট দৃঢ় ছিল। প্রতিপক্ষকে তাদের নিজস্ব ফুটবলেই আটকে রাখার চেষ্টা চলছিল।
কিন্তু এরপরেই আসে ম্যাচের প্রথম ভুল। কর্নার থেকে বল পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে না পারায় ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের হাফ ভূল বল চলে যায় হংকংয়ের এভেরতন কামারগোর কাছে। হামজা হামলা করতে চাইলেও সময় ছিল না; বল জালে গিয়ে বাংলাদেশের লিড হারানো শুরু হয়। এই ভুলটি পুরো ম্যাচের মোমেন্টাম হংকংয়ের দিকে নিয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সেই প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে চাপ দিতে ব্যর্থ হয় এবং ৫০তম মিনিটে সোহেল রানা জুনিয়রের ভুলে হংকং গোল করে ম্যাচে এগিয়ে যায়। বাংলাদেশের বক্সে ভুল ক্রমাগত হংকংয়ের জন্য উপহার হিসেবে রূপ নিত। গোলের ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসকে কমিয়ে দেয়।
৬৮তম মিনিটে হংকংয়ের রাফায়েল মেরকেজ দুই গোলের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করেন। বাংলাদেশ মাঠে দাপট দেখালেও প্রতিপক্ষের তাত্ক্ষণিক জবাব এবং ত্রুটিপূর্ণ রক্ষণভাগ হারের পথ প্রশস্ত করে। ৮৪ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিক থেকে শেখ মোরসালিনের গোল ম্যাচের নাটকীয়তা বৃদ্ধি করে।
শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশের পেশাদারিত্ব এবং আক্রমণ প্রচেষ্টা চোখে পড়ার মতো ছিল। অভিষিক্ত জায়ান আহমেদ বদলি হিসেবে মাঠে এসে কর্নার আদায় করেন। সেই কর্নার থেকে মোরসালিনের ক্রসে শমিতের মাথায় বল গিয়ে জাল বেঁধে দেয়, যা তাত্ক্ষণিকভাবে বাংলাদেশের প্রত্যাবর্তনের আশা জাগায়। কিন্তু রেফারির নতুন খেলার নির্দেশ এবং শেষ মুহূর্তে সাদ উদ্দিনের ত্রুটিপূর্ণ পাস মেরকেজের কাছে পৌঁছে দেয় এবং তিনি হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা দিগ্বিদিক ছুটে যাওয়াটা দেখাল যে, এই হারের পর দলের মধ্যে কতটা হতাশা বিরাজ করছিল। বাংলাদেশের ফুটবল দলের জন্য এটি ছিল এক প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে উচ্চমাত্রার নাটক ও হতাশার মিশ্রণ। প্রতিপক্ষের র্যাঙ্কিং ৩৮ ধাপ উপরে হলেও, তিনটি স্পষ্ট ভুল বাংলাদেশকে হেরে দিয়েছে, যা এশিয়ান কাপের স্বপ্নকে শেষ করে দিয়েছে।
ম্যাচের বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের ফুটবল দল সফল আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষা দিক থেকে ভাল প্রয়াস দেখিয়েও নিজের ভুলে হারেছে। এই ভুলগুলো দলের মনোবল এবং সমর্থকের আশা দুটোকেই প্রভাবিত করেছে। এ ম্যাচ স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়েছে যে, প্রতিযোগিতার মাঠে শুধু দক্ষতা নয়, মানসিক দৃঢ়তা এবং রক্ষণভাগের সতর্কতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
শেষবারের মতো বাংলাদেশের এশিয়ান কাপের স্বপ্ন শেষ হয়েছে ৪-৩ হারের মাধ্যমে, কিন্তু মাঠে উপস্থিত দর্শকরা নিশ্চিতভাবেই জানবেন, এই ম্যাচ ছিল একটি শিক্ষা, একটি নাটক, এবং একেকটি ভুলের ফলাফল কেমন ভয়াবহ হতে পারে, তার স্পষ্ট উদাহরণ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ