
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার বিকেলে দলটির ঘোষিত কর্মী সমাবেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পণ্ড হয়ে যায়। সমাবেশ ঘিরে শুরু থেকেই উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে, পরে সেখানে সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। মুহূর্তেই এলাকা জুড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও হুড়োহুড়ির সৃষ্টি হয়।
চোখে মুখে পানি ও ধোঁয়ার কারণে অনেক নেতাকর্মী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। কেউ কেউ পাশের গলিতে আশ্রয় নেন, আবার কেউ পুলিশের সামনে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। কাকরাইল মোড় থেকে শান্তিনগর ও বিজয়নগর পর্যন্ত এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ তখন লাঠিচার্জ করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
জাতীয় পার্টি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না—এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব ক্রমেই বাড়ছিল। দলীয় প্রতীক ‘লাঙল’ নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল, ক্ষমতাসীন একটি মহল এর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। এ বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের শনিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে জরুরি কর্মী সমাবেশ ডাকেন।
দলটির ঘোষণায় বলা হয়েছিল, এই সমাবেশে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ‘লাঙল’ প্রতীক রক্ষায় করণীয়, এবং দলের ভেতরের বিভাজন—সব বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বিকেল তিনটার পর থেকেই কাকরাইল, শান্তিনগর ও নাইটিঙ্গেল এলাকার বিভিন্ন দিক থেকে মিছিল আসতে থাকে। ট্রাকে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে প্রথমে বক্তব্য দিতে ওঠেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। এর কিছুক্ষণ পর মঞ্চে উপস্থিত হন চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
চেয়ারম্যানের আগমনেই উৎসাহিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন হাজারো নেতাকর্মী। “লাঙল থাকবে, জাপা বাঁচবে”, “কাদের ভাই এগিয়ে চলো”—এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে কাকরাইল মোড়। কিন্তু বক্তৃতা শুরুর আগ মুহূর্তে মিছিলের একাংশ পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে সমাবেশস্থলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়, নারী কর্মীরাও আতঙ্কে দিকবেদিক ছুটতে থাকেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, “অনুমতি ছাড়াই জনসমাগম বাড়ানো এবং সড়ক অবরোধ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার শেল ব্যবহার করা হয়। সমাবেশ ছত্রভঙ্গ হলেও এখন এলাকা নিয়ন্ত্রণে।”
তিনি আরও বলেন, সমাবেশে উপস্থিত কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মী ইটপাটকেল ছুড়ে পুলিশকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় কাকরাইল, শান্তিনগর ও বিজয়নগর এলাকায়।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সেন্টু অভিযোগ করেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মী সমাবেশ করছিলাম। পুলিশ বিনা উসকানিতে টিয়ার শেল ছোড়ে এবং আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ করে।”
তিনি আরও বলেন, “এই সমাবেশে আমরা শুধু দলের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশ ঘোষণা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু পক্ষ চায় না জাপা স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করুক।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ