
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে আগামী ১৫ অক্টোবর স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে ঐতিহাসিক জুলাই সনদ। দেশের রাজনীতিতে এই সনদকে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের নেতৃত্ব দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, এবং এতে অংশ নেবেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা।
সনদকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দল দুটির শীর্ষনেতারা বলছেন, এটি অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের মানুষের বহুল কাঙ্ক্ষিত জুলাই সনদ, যা দেশের স্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা আশাবাদী, সনদকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ইতিবাচক সমঝোতা হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতেই সব দল এতে স্বাক্ষর করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী শুক্রবার রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পর সাংবাদিকদের বলেন, “১৫ অক্টোবর স্বাক্ষর হতে যাওয়া জুলাই সনদকে বিএনপি ইতিবাচকভাবে দেখছে। রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই এই সনদের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আমরা আশাবাদী, জুলাই সনদ নিয়ে একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক সমঝোতা হবে।”
জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “১৫ অক্টোবর স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে। ঐকমত্য হয়ে গেলে আমরাও স্বাক্ষর করব। তবে কিছু ইস্যু এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। এই কয়েকদিনে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। জুলাই সনদ স্বাক্ষরের বিষয়টি জাতির বড় প্রত্যাশা। আমরা ইতিবাচক হিসাবে দেখছি।”
তিনি আরও জানান, পিআর (প্রতিনিধি নির্বাচনের) পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করে গণভোট আয়োজন করতে হবে। জনগণ গণভোটে যে মতামত দেবে, তা জামায়াত মেনে নেবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি বিষয়ে কমিশনের প্রস্তাবনা এবং নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে সমন্বয়ের পরই তারা স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “উচ্চকক্ষে পিআর বিষয়ে এনসিপি কোনো ছাড় দেবে না। যদি নোট অব ডিসেন্ট থাকে, তাহলে তা নির্বাচনের আগে গণভোটে সমাধান করতে হবে।”
জুলাই সনদ নিয়ে তিন দফায় মোট ৭২টি বৈঠক করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
-
গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সরকার ৬টি সংস্কার কমিশন গঠন করে।
-
এই কমিশনের রিপোর্টের আলোকে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা শুরু।
-
এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৪৪টি বৈঠক, ৩ জুন থেকে ৩০ জুলাই ২৩টি বৈঠক এবং ১ আগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণভোটের ভিত্তি, সময় ও পদ্ধতি নিয়ে কিছু মতবিরোধ থাকলেও, শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যের ভিত্তিতে সব দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশাবাদী। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি দেশের স্থায়ী রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং দীর্ঘ সময় ধরে রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ার ফলাফল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ