
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার (১৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে এক বিস্ফোরক বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। সেখানে তিনি ‘মুজিববাদী’ আদর্শ ও ভারতের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের কথিত নতজানু অবস্থান নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন এবং নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তোলেন।
সারজিস আলম বলেন, “১৯৭২ সালের সংবিধান একটি মুজিববাদী দলীয় দলিল। এটি একটি আদর্শ বহন করে, যা বাংলাদেশের জাতীয় চেতনা ও সার্বভৌমত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আজ যারা বাংলাদেশপন্থি একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে চান, তাদের জন্য এই সংবিধান গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আজ আবার জুলাই মাসে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে গত জুলাই-আগস্টে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা রক্ত দিয়েছে। তবু আজ পর্যন্ত আমরা সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ পাইনি। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি।”
সারজিস অভিযোগ করেন, মুজিববাদীরা এখনও গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে আছে এবং তারা নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তার ভাষায়, “এদের মোকাবিলা করতে হবে কেবল আইন দিয়ে নয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যারা ভারতপন্থি শক্তিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তারা আসলে এই দেশবিরোধী শক্তির অংশ। বাংলাদেশ হবে বাংলাদেশপন্থিদের—এখানে কোনো ভারতপন্থি বা অন্য কোনো বাদপন্থির ঠাঁই নেই।”
আন্দোলনকারী পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবেই বক্তব্য রাখেন সারজিস। তিনি বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সুশীল মুখোশ চাই না। আমরা তাদেরকে অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারের ভূমিকায় দেখতে চাই। তারা যেন সেই সরকারের ভূমিকা পালন করে যারা খুনি শেখ হাসিনার বিচারের রায় দেবে এবং তা বাস্তবায়ন করবে।”
এ সময় তিনি বিচার বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সতর্ক করে বলেন, “আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের বিচারবিভাগ বা তোষামোদকারী প্রশাসন দেখতে চাই না। দেশের বিচার বিভাগ নিরপেক্ষ থাকতে হবে এবং জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে।”
সারজিস আলম আরও বলেন, “আমাদের নতুন সংবিধান লাগবে, গণপরিষদ নির্বাচন দিতে হবে। এই নতুন সংবিধানে নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সংখ্যালঘু ভাই-বোনদের অধিকারও সুরক্ষিত থাকতে হবে।”
তিনি দৃঢ়ভাবে জানান, “আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য চাই, তবে কোনো দলের অন্ধ দালালি নয়। কেউ চাঁদাবাজি করলে বলব, সিন্ডিকেট করলে মুখের ওপর বলব। কাউকে দখলদারি করতে দিলে বলব—তবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই থেকে একচুলও সরব না।”
বক্তব্যে তিনি বারবার স্মরণ করেন গত বছরের আন্দোলনের শহিদদের। বলেন, “গত আগস্টে আমাদের স্বপ্ন ছিল, আরেকটি আগস্ট আসছে কিন্তু আমরা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারিনি। তবে আজকে হাজার হাজার সহযোদ্ধাকে সামনে দেখে আমি আশাবাদী, এবার আমরা সফল হব।”
জামায়াতে ইসলামীর এই সমাবেশকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এভাবে প্রকাশ্যে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে জামায়াতের বড় সমাবেশ ও তাতে এনসিপির মতো সংগঠনের অংশগ্রহণ নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ ও মেরুকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেও বিশ্লেষকদের অভিমত।
সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের মঞ্চে জাতীয় নাগরিক পার্টির এমন সরব অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে বৃহত্তর বিরোধী জোট গঠনের পথ তৈরি করতে পারে বলেও ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ