
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের একটি তিন বছরের মিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছে, যা বাংলাদেশের মানবাধিকার ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা মিশনটির কার্যক্রমের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) জেনেভার জাতিসংঘ মানবাধিকার অফিসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম, এবং জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক। এই তিন বছরের চুক্তি পরে নবায়নযোগ্য এবং তা বাংলাদেশের মানবাধিকারক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক বলেন, “এই স্মারকলিপি স্বাক্ষর মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, যা দেশের মানবাধিকার উন্নয়নের নতুন মাত্রা যোগ করবে। আমাদের মিশন তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনগুলোতে প্রদত্ত সুপারিশ বাস্তবায়নে আরও কার্যকর সহায়তা প্রদান করবে। পাশাপাশি আমরা সরকার, নাগরিক সমাজ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে যুক্ত হয়ে মৌলিক সংস্কারগুলোকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করব।”
নতুন এই মিশন বাংলাদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি পূরণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের কর্তৃপক্ষ, সরকারি সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, এই চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় বসেনি, তবে পররাষ্ট্রসচিব চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে সরকার পক্ষের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন প্রদান করেছেন এবং তা জেনেভায় পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এই চুক্তির মেয়াদ তিন বছর এবং পরে চাইলে নবায়ন করার সুযোগ রয়েছে। চলতি সময়ে মিশনটি তার কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ধাপে ধাপে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করবে।
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের অফিস উল্লেখ করেছে, নতুন মিশনটি শুধু প্রশিক্ষণ ও সহায়তা প্রদানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং দেশের মানবাধিকার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে সমাধান আনতে মাঠ পর্যায়ে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করবে।
বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করে এবং জাতিসংঘের এই ধরনের সহযোগিতা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করবে বলে আশা করছে।
এই নতুন মিশন বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ও সংস্কারের ক্ষেত্রে নতুন পথপ্রদর্শক ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে, জাতীয় নীতিমালা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশে সাম্প্রতিক সময়ে মানবাধিকার পরিস্থিতির দিকে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পর্যায়ে নজরদারি বাড়ায় এই মিশন একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
জাতিসংঘের এই মানবাধিকার মিশনের কার্যক্রম শুরু বাংলাদেশের মানবাধিকার সুরক্ষা, প্রচার এবং উন্নয়নে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। দেশের সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এটি নাগরিক সমাজের ক্ষমতায়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিরোধ এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কাঠামোর সঙ্গে আরও সুসংহত হয়ে উঠবে এবং দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ