
ছবি: সংগৃহীত
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। এই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির টর্চলাইট মিছিল করেছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) রাত সোয়া ৯টায় সংগঠনটির শত শত নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে বের হন।
ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ছাত্রী হল সংলগ্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও শাখা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন।
মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান, অফিস সেক্রেটারি রাশেদুল ইসলাম রাফি, প্রচার সম্পাদক সৈয়দ আবসার নবী হামযা, আন্তর্জাতিক ও স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক হাসানুল বান্না অলিসহ সংগঠনের প্রায় কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী।
সমাবেশে বক্তারা জানান, শিক্ষার্থী সাজিদের অস্বাভাবিক মৃত্যু কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনার পেছনে প্রকৃত কারণ উদঘাটনে নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের দাবি জানান তারা। একইসঙ্গে তারা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শতভাগ সিসিটিভি কাভারেজ ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা এখানে এসেছি শুধুমাত্র সাজিদের ন্যায়বিচারের দাবিতে। সে ছিল আমাদের ভাই, আমাদের সহপাঠী। আমরা এর কোনো রাজনৈতিক ব্যবহার চাই না, কিন্তু প্রশাসনের অবহেলা সহ্য করব না। যদি অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ না করা হয়, তাহলে গোটা ক্যাম্পাসে আমরা বৃহত্তর ছাত্রআন্দোলন গড়ে তুলব। প্রয়োজন হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেব।”
তিনি আরও বলেন, “আপনারা যারা প্রশাসনে আছেন, মনে রাখবেন—এই দায়িত্ব আপনাদের আন্দোলনের মাধ্যমেই এসেছে। এখন যদি সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তাহলে ছাত্রসমাজ আর আপনাদের মেনে নেবে না।”
সাজিদের মৃত্যু ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে যে নিরাপত্তাহীনতা ও হতাশা বিরাজ করছে, তার প্রতি ইঙ্গিত করে শিবির সভাপতি বলেন, “আপনারা বলছেন ফান্ড নেই। দরকার হলে আমরা ভিক্ষা করব, তবু নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি কোণা সিসিটিভি ও আলোয় আলোকিত করতে হবে।”
গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হলসংলগ্ন পুকুরে ভেসে ওঠে কোরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহর নিথর দেহ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
সাজিদ ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলায়। তার সহপাঠীদের দাবি, সাজিদ একজন নম্র-ভদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। তার মৃত্যু ঘিরে স্বাভাবিক কোনো ব্যাখ্যা মেলেনি। ফলে স্বজন ও সহপাঠীরা এটিকে 'রহস্যজনক' বলেই মনে করছেন।
শিবিরের দাবি, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু যেন আর না ঘটে, সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গা সিসিটিভির আওতায় আনতে হবে, রাতের অন্ধকার দূর করতে পর্যাপ্ত আলো স্থাপন করতে হবে।
তারা আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বর্তমানে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। এটা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য স্বাভাবিক পরিস্থিতি নয়।
সাজিদের মৃত্যু শুধু একজন শিক্ষার্থীর প্রাণহানি নয়, এটি গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে নিরপেক্ষ তদন্ত, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং প্রশাসনের জবাবদিহিতাই এখন ছাত্রসমাজের একমাত্র প্রত্যাশা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি এই মুহূর্তে দ্রুত, দৃশ্যমান ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ