
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপিতে শৃঙ্খলা ও শুদ্ধি অভিযান শিগগিরই শুরু হতে যাচ্ছে। দলটির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড থেকে শুরু করে সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়া নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিশেষ করে চাঁদাবাজি, দখলদারি, মব সৃষ্টিসহ খুনের মতো গুরুতর অভিযোগ যারা করেছে, তাদের প্রথম দফায় এই অভিযানের আওতায় আনা হবে। এই অভিযান দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভাবমূর্তি রক্ষার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব কমানোর চেষ্টা হিসেবেও নেওয়া হচ্ছে।
একদিকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফেরাতে দলীয় কমিটি ও নেতা-কর্মীদের ব্যাপক যাচাই-বাছাই চলছে, অন্যদিকে তিন অঙ্গসংগঠন—জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক পন্থায় দেশের সামাজিক অশান্তি ও মব দমন করে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দলের চেইন অব কমান্ড ঠিক রাখতে খুব শিগগিরই জেলা, মহানগর থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে কেন্দ্রীয় নেতারাও ছাড় পাবে না।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “সম্প্রতি দেশে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থান গণতন্ত্রের জন্য আশা জাগিয়েছে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে মবতন্ত্রের দাপট। সরকারের নির্লিপ্ততার কারণে দেশের সর্বত্র মবতন্ত্রের রাজত্ব চলছে। এজন্য সবাইকে মবতন্ত্র বিরোধী লড়াইয়ে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
দলের কেন্দ্রীয় সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের প্রায় ৫ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এখনও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের অভ্যন্তরীণ অনেক নেতা-কর্মী এখনও অবাধে চাঁদাবাজি, দখলদারি ও মব সৃষ্টির মতো কার্যকলাপে লিপ্ত।
ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় বিএনপির কমিটির শীর্ষ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ উঠে আসছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং যথাযথ প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলো ভেঙে পুনর্গঠন করা হতে পারে।
এছাড়া দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল হওয়ায় মব সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটেছে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। ফলে সামাজিক শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়েছে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরও।
বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মিডিয়া সেলের সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “দলের ইমেজ নষ্ট করবে এমনদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অপরাধী ও অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা ছাড়াও প্রয়োজন অনুসারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা মবতন্ত্রে বিশ্বাস করি না এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।”
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “দলের সুনাম রক্ষার স্বার্থে অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও এ কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়ায় নেতিবাচক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”
দলের অভ্যন্তরে ‘হাইব্রিড’ বা সুবিধাভোগী নেতাদের দাপট বেড়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। যেসব নেতারা সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত ছিলেন, তারাই বর্তমানে বিএনপির কমিটিতে বসে দখল ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। পাশাপাশি নতুন নামে নব্য বিএনপির কিছু সদস্যও বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে দলের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছে। এ কারণে দলটির মূল ঘরাণার নেতাকর্মীরা বিব্রত এবং কোণঠাসা বোধ করছেন।
বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো রীতিমতো মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। দলটি দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় মবতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক ও সামাজিক মব সৃষ্টির মাধ্যমে দলীয় ইমেজ নষ্টের অপচেষ্টা প্রতিহত করতে দল সতর্ক ও সক্রিয় রয়েছে।
মবতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের পক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনামাফিক কর্মসূচি নেওয়া হবে। দলমত নির্বিশেষে এই অরাজকতাবিরোধী সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও সামাজিক আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপির শুদ্ধি অভিযান এবং মবতন্ত্র বিরোধী লড়াই এখন সময়োপযোগী ও জরুরি। দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির এই উদ্যোগ রাজনৈতিক দিক থেকে দলের দৃঢ়তা বাড়াবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দলটির ইমেজ উন্নত করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ