
ছবি: সংগৃহীত
দুই প্রতিবেশী দেশের ভিসা নীতিকে ঘিরে দীর্ঘদিন ধরেই নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে ভারতীয় ভিসা পাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য একটি জটিল ও অনিশ্চিত প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছিল। এমন প্রেক্ষাপটে এবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশিদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিসা দিচ্ছে ভারত। যদিও বাস্তবে বাংলাদেশে ভারতের স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রম এক বছরের বেশি সময় ধরে সীমিত রয়ে গেছে, যার কারণে ভিসা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নয়াদিল্লিতে আয়োজিত সাপ্তাহিক নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ মন্তব্য করেন। এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা তো ভিসা দিচ্ছি বাংলাদেশে। নানা কারণে ভিসা দেয়া হচ্ছে, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে দেয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “যেসব কারণে ভিসা দেয়া হচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরণের ভ্রমণ, মেডিকেল ইমার্জেন্সি ও স্টুডেন্ট ভিসা। এসব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশি নাগরিকরা ভিসা পাচ্ছেন।”
তবে এ মন্তব্য করার সময় তিনি কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান বা সময়সীমা উল্লেখ করেননি। সংবাদ সম্মেলনে পরিস্কার করে ভিসা অনুমোদনের সংখ্যা বা হার সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “এটা আমাকে জেনে বলতে হবে।”
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে ভারতের স্বাভাবিক ভিসা কার্যক্রম অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়ে। পর্যটন, ব্যবসা বা ভিজিট ভিসা দেওয়া একপ্রকার বন্ধ হয়ে যায় বললেই চলে। শুধুমাত্র জরুরি ভ্রমণ, চিকিৎসা বা শিক্ষাগত কারণে সীমিত সংখ্যক আবেদনকারীকে ভিসা দেওয়া হয়। এতে হাজার হাজার আবেদনকারী প্রতিনিয়ত ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তির জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বিশেষ করে চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে যেতে ইচ্ছুক রোগীদের জন্য এই ভিসা সমস্যা একটি গুরুতর সংকটে রূপ নিয়েছে। বহু বাংলাদেশি রোগী প্রতিদিন ভারতের ভেলোর, চেন্নাই, ব্যাঙ্গালুরু কিংবা কলকাতার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু বর্তমান ভিসা জটিলতায় তারা ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও নিতে পারছেন না সময়মতো।
নয়াদিল্লির এমন মন্তব্য এমন সময় এলো যখন বাংলাদেশে ভারতের ভূমিকা নিয়ে একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ক্রমবর্ধমান। বিশেষ করে দেশটির ‘ভিসা কূটনীতি’কে অনেকেই ভারতীয় কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের একটি অঘোষিত কৌশল হিসেবে বিবেচনা করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে ভারতের সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার পরিবর্তন, অভ্যন্তরীণ নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক নজরদারি এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির প্রভাব এসব ইস্যুতে ভারত নিজের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করছে।
সংবাদ সম্মেলনে গোপালগঞ্জে সম্প্রতি সংঘটিত সহিংসতার বিষয়ে ভারতীয় অবস্থান জানতে চাইলে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, “আমাদের অঞ্চলে যে কোনো ডেভেলপমেন্টের দিকেই আমরা সতর্ক নজর রাখি, সেটা আমলে নিই এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের যা করণীয় সেটাও করা হয়।”
তিনি এ বিষয়ে সরাসরি কোনো নিন্দা বা উদ্বেগ প্রকাশ না করলেও কূটনৈতিকভাবে এটিকে একটি সতর্ক অবস্থান প্রকাশের বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, এর আগের দিন মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা সুবিধা চালুর ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে শ্রমবাজারে প্রবেশ সহজ হবে এবং পুনঃপ্রবেশ প্রক্রিয়ায় জটিলতা হ্রাস পাবে। এর বিপরীতে ভারতের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট পরিকল্পনাহীন বলে অভিযোগ উঠছে।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশিদের ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে’ ভিসা দেওয়ার দাবি করা হলেও তার পক্ষে এখনো পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং বাস্তবতা হলো, ভিসার আবেদন থেকে শুরু করে সাক্ষাৎকার ও অনুমোদনের প্রতিটি ধাপে বাংলাদেশিদের দীর্ঘ অপেক্ষা, অনিশ্চয়তা ও মানসিক চাপ সহ্য করতে হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, দুই দেশের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক রক্ষায় ট্র্যাকেবল, স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট ভিসা নীতিমালা প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়ন সময়ের দাবি। নয়াদিল্লির বক্তব্য বাস্তব প্রভাব ফেলবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ