
ছবি: সংগৃহীত
দেশের বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য উৎসব ভাতার হার দ্বিগুণ করে মূল বেতনের ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে সরকার। এত দিন পর্যন্ত তাঁরা মূল বেতনের মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা পেয়ে আসছিলেন। এই সিদ্ধান্ত আসন্ন ঈদুল আজহার আগেই বাস্তবায়ন হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যেখানে উপসচিব (প্রবিধি অনুবিভাগ) মোসা. শরীফুন্নেসা স্বাক্ষর করেন। আদেশে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা মূল বেতনের ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। তবে কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা বহাল রাখা হয়েছে।
অর্থ বিভাগের জারি করা নির্দেশনায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্তও যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হলো—উৎসব ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত যাবতীয় আর্থিক বিধিবিধান কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। ভবিষ্যতে এই সংক্রান্ত ব্যয়ে কোনো প্রকার অনিয়ম হলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষকেই এর জন্য দায়ী করা হবে।
এছাড়া এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়কে প্রথমে একটি আদেশ (জিও) জারি করতে হবে, এবং সেটি জারি করার দিন থেকেই নতুন উৎসব ভাতা কার্যকর হবে। এই জিও পরে অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে অনুমোদনের জন্য।
এ উদ্যোগের সূচনা ঘটে গত ২১ এপ্রিল, যখন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে একটি প্রস্তাব পাঠায়। তাতে বেসরকারি স্কুল ও কলেজের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ২৫ থেকে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার পাশাপাশি কর্মচারীদের ভাতা ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশে বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
পরবর্তী সময়ে ১৩ মে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ একই ধরনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠায়—যাতে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।
অবশেষে, সরকার উৎসব ভাতার খাতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে ২২৯ কোটি টাকা পুনঃউপযোজনের প্রস্তাবে সম্মতি দেয়। ৭ মে অর্থ বিভাগ থেকে এই প্রস্তাবে সম্মতি জানানো হয়। যদিও সেই প্রস্তাবে শিক্ষক ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর কথা থাকলেও, প্রজ্ঞাপনে শুধু শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তে শিক্ষক মহলে স্বস্তি দেখা দিলেও কর্মচারীদের মাঝে কিছুটা হতাশা বিরাজ করছে। তাঁদের দাবি ছিল, কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করার, যা প্রস্তাবে ছিলও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর না হওয়ায় তাঁরা নিজেদের বঞ্চিত মনে করছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানোর দাবি ছিল। এই সিদ্ধান্তে তাঁরা সন্তুষ্ট হলেও, কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও একইরকম সুবিচার হওয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেন।
এই উৎসব ভাতা পাবেন কেবলমাত্র মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। নতুন হারে বোনাস দেওয়া হবে ২০২৫ সালের ঈদুল আজহার আগেই, অর্থাৎ আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহেই তাঁরা বাড়তি এ অর্থ হাতে পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়ম যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই ভাতা প্রদানের সময় যাবতীয় নথিপত্র, বিল ও অডিট সঠিকভাবে সম্পাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ করল। তবে কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানো হয়নি বলে একাংশে অসন্তোষ রয়ে গেছে। সরকারের এই পদক্ষেপ শিক্ষা খাতের বেসরকারি অংশের প্রণোদনার দিক থেকে একটি বড় পদক্ষেপ হলেও, পূর্ণাঙ্গ সমাধানের জন্য কর্মচারীদের দাবিগুলোও পরবর্তী সময়ে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার দাবি রাখে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ