 
					ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে প্রয়োজনীয় বদলি ও পদায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত ও জটিলতামুক্ত করার লক্ষ্যে সরকার জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি বিলুপ্ত করেছে। বুধবার (২৯ অক্টোবর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ কমিটি বাতিলের ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি, পদায়ন ও নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলো সরাসরি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিজস্ব ক্ষমতায় পরিচালনা করতে পারবে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, জনপ্রশাসন বিষয়ক এই কমিটি মূলত গঠন করা হয়েছিল উচ্চপদস্থ আমলাদের নিয়োগ, বদলি ও শৃঙ্খলাবিষয়ক পরামর্শ প্রদানের উদ্দেশ্যে। ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি এই কমিটি গঠিত হয়, যার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছয় সদস্যবিশিষ্ট এই কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের অভিজ্ঞ আমলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে পরে তিন দফায় কমিটির গঠনে পরিবর্তন আনা হয়, যাতে প্রশাসনিক কার্যক্রমে আরও সমন্বয় আনা যায়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শুরুতে কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, মাঠ পর্যায়ের বদলি-পদায়ন বা নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিটির পরামর্শ নিতে গিয়ে প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ে। কোনো কর্মকর্তার বদলি বা পদায়নের ফাইল কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকত, ফলে প্রশাসনিক কাজকর্মে গতি কমে যায়।
একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনকে সক্রিয় ও গতিশীল রাখাটা এখন সবচেয়ে জরুরি। কিন্তু কমিটির মতামত বা অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় প্রয়োজনীয় বদলি-পদায়ন বিলম্বিত হচ্ছিল। এটি নির্বাচনপূর্ব প্রস্তুতিতে বাধা তৈরি করছিল। তাই সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কমিটিটি বাতিল করেছে।”
উল্লেখ্য, এই কমিটি বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, যুগ্ম সচিব থেকে শুরু করে সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিত। বিশেষ করে মাঠ প্রশাসনে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কমিটির মতামত গ্রহণ বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে প্রশাসনকে আরও নমনীয় ও কার্যকর করার স্বার্থে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মনে করছে, এখন এ ধরনের কমিটির প্রয়োজন নেই।
প্রজ্ঞাপন জারির পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দ্রুত নির্দেশনা পাঠিয়েছে সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের কাছে। এতে বলা হয়েছে, এখন থেকে কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করলেই যথেষ্ট হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী মন্ত্রণালয় সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি বাতিলের সিদ্ধান্ত সরকারের নির্বাচনী কৌশলের অংশ। কারণ, মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন—বিশেষত ভোটকেন্দ্র ব্যবস্থাপনা, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা এবং সরকারি সম্পদের ব্যবহার বিষয়ে। ফলে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারাটা সরকারের জন্য কৌশলগত সুবিধা তৈরি করবে।
অন্যদিকে কিছু প্রশাসনিক কর্মকর্তা মনে করছেন, কমিটি বাতিলের ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি যেমন বাড়বে, তেমনি প্রশাসনিক জবাবদিহিতার ঘাটতিও দেখা দিতে পারে। কারণ, আগে কমিটি থাকায় বদলি-পদায়নের ক্ষেত্রে অন্তত একটি পর্যবেক্ষণ কাঠামো কাজ করত। এখন সেই ব্যবস্থা না থাকায় পুরো বিষয়টি এককভাবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচনকালীন সময়কে কেন্দ্র করে প্রশাসনকে কার্যকর রাখাই এখন মূল লক্ষ্য। এই সময়ে দ্রুত বদলি ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন, যাতে মাঠ পর্যায়ে সরকারি কার্যক্রম এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি দুটোই নির্বিঘ্নে চলে।
একজন সিনিয়র সচিব বলেন, “এটি একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রশাসনে দ্রুত সমন্বয় দরকার। মাঠ পর্যায়ে দক্ষ কর্মকর্তাদের স্থাপন করতে হবে, এবং তার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা যত কম স্তরে কেন্দ্রীভূত থাকবে, তত দ্রুত কাজ হবে।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত সরকারের নির্বাচনী প্রশাসনিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ই সরাসরি কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়নের সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে মাঠ প্রশাসনকে আরও দ্রুত, কার্যকর ও নির্বাচনী পরিস্থিতির উপযোগী করা যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
 
				.png)
.png)
.png)



