 
					ছবি: সংগৃহীত
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট, প্রবাল পাথরের দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। এই দ্বীপকে ঘিরে দেশের পর্যটনশিল্প বরাবরই উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এক সময় পর্যটকরা কক্সবাজার থেকে ইনানী নৌবাহিনীর জেটি ব্যবহার করে মাত্র চার ঘণ্টার ভ্রমণে দ্বীপে পৌঁছে দিন কাটাতেন। তবে চলতি বছরের নভেম্বর থেকে সরকারি অনুমতি সত্ত্বেও পর্যটকের আগমন অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার ফলে দ্বীপ ভ্রমণে চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত শনিবার (১ নভেম্বর) সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুমতি জারি করেছে। তবে অনুমতি সত্ত্বেও কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া বিআইডাব্লিউটিএ জেটি ঘাট থেকে জাহাজে যাত্রা করতে পর্যটকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, এই ঘাট থেকে যাত্রার ফলে দ্বীপ পৌঁছাতে লাগছে প্রায় ৯ থেকে ১০ ঘণ্টা, যার কারণে পুরোদিনের সময় কেবল যাত্রায় শেষ হচ্ছে। ফলে পর্যটকরা দ্বীপ দর্শনের আনন্দ উপভোগ করতে পারছেন না এবং জাহাজ চলাচলে আগ্রহও কমছে।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, মেরিন ড্রাইভের ইনানী নৌবাহিনীর জেটি ব্যবহার করা হলে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার ব্যবস্থা সম্ভব হবে। এতে পর্যটকরা কম সময়ে দ্বীপে পৌঁছে স্বাচ্ছন্দ্যে পর্যটন করতে পারবে। সেন্ট মার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন ‘সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’–এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, নভেম্বরে পর্যাপ্ত পর্যটকের সাড়া না থাকায় জাহাজ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে পর্যটক সাড়া অনুযায়ী পুনরায় জাহাজ চলাচলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সেন্ট মার্টিন ও কুতুবদিয়া দ্বীপের বিস্তৃত উপকূলীয় এলাকা ইসিএ (Environmental Critical Area) হিসেবে বিবেচিত। যদি দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে হয়, তবে ইনানী জেটির বিকল্প নেই। জাহাজ মালিকরা প্রশ্ন করছেন, শুধু ইসিএ এলাকা বলে পর্যটকবাহী জাহাজকে অন্য ঘাট থেকে যাত্রা করতে না দেওয়ার কারণ কী। তারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উচিত একবার নুনিয়াছড়া ঘাট দিয়ে যাত্রা করে দ্বীপে আসা-যাওয়া করে পর্যটকের বাস্তব অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করা।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও ইতিহাসবিদ ড. হাবিবুর রহমানও জানিয়েছেন, আগে ইনানী জেটি ব্যবহার করলে পর্যটকরা কম সময়ে দ্বীপে পৌঁছাতেন এবং বেশি সময় দারুণভাবে দ্বীপে ঘোরাঘুরি করতে পারতেন। বর্তমানে কক্সবাজার থেকে যাত্রার ফলে পর্যটকরা অনেক সময় নৌযানে কাটাচ্ছেন, ফলে দ্বীপে তাদের আসল ভ্রমণের সময় কমে যাচ্ছে।
ড. হাবিবুর রহমান বলেন, “দ্বীপে পর্যটক যাতায়াতের সময় সীমিত। অথচ পর্যটন ও মানুষের আয়ের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য দ্বীপ খুলে দেওয়া হলে স্থানীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। নিরাপত্তার কারণে যদি টেকনাফ থেকে সুবিধা না হয়, তবে ইনানী থেকে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিলে পর্যটকরা কম সময়ে দ্বীপে পৌঁছাবে এবং দ্বীপের মানুষও উপকৃত হবে।”
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, প্রশাসন দ্রুত বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেবে এবং পর্যটকরা স্বল্প সময়ে দ্বীপে পৌঁছে স্বাচ্ছন্দ্যে পর্যটন করতে পারবে। সেন্ট মার্টিনের পর্যটক অভিজ্ঞতা পুনরায় আগের মতো প্রাণবন্ত করতে হলে জাহাজ চলাচলে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ অপরিহার্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
 
				.png)
.png)
.png)



