 
					ছবি: সংগৃহীত
মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অনেক কাজই আছে, যেগুলো দেখতে সাধারণ ও ক্ষুদ্র মনে হলেও ইসলামের দৃষ্টিতে সেগুলো ভয়াবহ পরিণতির কারণ হতে পারে। ইসলাম এমন কিছু কাজ সম্পর্কে কঠোরভাবে সতর্ক করেছে, যেগুলোর কারণে ফেরেশতারা মানুষের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করেন। একজন সচেতন মুমিনের উচিত এসব কাজ সম্পর্কে জানা এবং সেগুলো থেকে দূরে থাকা, যেন সে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাদের অভিশাপ থেকে রক্ষা পায়।
নিচে এমন কয়েকটি কাজ তুলে ধরা হলো, যেগুলোর কারণে মানুষ ফেরেশতাদের অভিশাপের শিকার হয়—
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাহাবিরা ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাঁরা ছিলেন সেই মানুষ, যারা নবীর (সা.) সান্নিধ্যে থেকে তাঁর দাওয়াত ও ত্যাগের পথে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁদের প্রতি অপমান, গালি বা অবমাননাকর মন্তব্য করা শুধু নৈতিক দৃষ্টিতেই জঘন্য নয়, বরং এটি এমন অপরাধ যার জন্য ফেরেশতাদের অভিশাপ নেমে আসে।
তাবরানির বর্ণনায় মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি আমার সাহাবিদের গালি দেবে, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ, ফেরেশতাদের অভিশাপ এবং সমগ্র মানবজাতির অভিশাপ অবতীর্ণ হোক।” (তাবরানি, হাদিস)
এই হাদিস স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, সাহাবিদের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ইসলামের মূল আদর্শের পরিপন্থী। যারা মহানবীর সাহচর্য লাভ করেছিলেন, তাদের প্রতি অসম্মান করা মানে সরাসরি নবীর (সা.) প্রতি অসম্মান করা। তাই একজন প্রকৃত মুমিনের কর্তব্য হলো সাহাবিদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের সম্পর্কে কোনো অবমাননাকর মন্তব্য থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা।
মদিনা মুনাওয়ারা—যেখানে মহানবী (সা.) বিশ্রাম নিচ্ছেন—ইসলামের অন্যতম পবিত্র শহর। এই শহরকে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (সা.) কিয়ামতের দিন পর্যন্ত হারাম বা নিষিদ্ধ অঞ্চল ঘোষণা করেছেন। এর পবিত্রতা রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বুখারির বর্ণনায় নবী করিম (সা.) বলেন, “হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই ইবরাহিম (আ.) মক্কাকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন, আর আমি মদিনার দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী অঞ্চলকে পবিত্র ঘোষণা করছি।” (বুখারি, হাদিস : ৩৯২২)
অর্থাৎ, মদিনাকে অপবিত্র করা বা সেখানে অন্যায় কাজ করা এমন একটি গুরুতর অপরাধ, যার কারণে ফেরেশতারা অভিশাপ বর্ষণ করেন।
ইমাম বুখারির আরেক বর্ণনায় ইবরাহিম তায়মি (রহ.) বলেন, আলী (রা.) একবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন— “যে কেউ মদিনার পবিত্র এলাকায় অন্যায় করবে, তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতাদের ও সমস্ত মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হবে।” (বুখারি, হাদিস : ৭৩০০)
এ থেকে বোঝা যায়, মদিনার পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু সম্মানের বিষয় নয়, বরং এটি ঈমানেরও অংশ।
আধুনিক সমাজে অনেকেই রাগ, আধিপত্য বা ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে অন্যের প্রতি অস্ত্র তাক করে। এটি মজা করেও করা হোক বা সিরিয়াসভাবে—ইসলামের দৃষ্টিতে এটি মারাত্মক গুনাহ।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দিকে লৌহ নির্মিত অস্ত্র দ্বারা ইঙ্গিত করে, সে তা নামিয়ে না রাখা পর্যন্ত ফেরেশতারা তাকে অভিশাপ দিতে থাকে, যদিও সে তার আপন ভাই হয়।” (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬০)
অর্থাৎ, অস্ত্র তুলে ধরা মানেই একটি ভয় ও অনিরাপত্তা সৃষ্টি করা, যা ইসলামের ভ্রাতৃত্ববোধের পরিপন্থী। ফলে এমন আচরণে ফেরেশতারা পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে অভিশাপ দেন।
ইসলাম ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ধর্ম। কেউ অপরাধ করলে তার প্রাপ্য শাস্তি থেকে তাকে অন্যায়ভাবে রক্ষা করা গুরুতর অপরাধ। অনেক সময় প্রভাব, অর্থ বা ক্ষমতার জোরে অপরাধীকে পার পাওয়ানো হয়—এমন কাজের প্রতিও ফেরেশতারা অভিশাপ বর্ষণ করেন।
ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন— “যদি কেউ কোনো দাঙ্গা-হাঙ্গামা, পাথর ছোড়াছুড়ি বা মারামারির মধ্যে পড়ে নিহত হয়, তাহলে তার রক্তের প্রতিকার ভুলবশত হত্যার মতো হবে। কিন্তু যদি ইচ্ছাকৃত হত্যা হয়, তবে কিসাস (বদলা) ওয়াজিব হবে। আর কেউ যদি এতে কোনো বাধা সৃষ্টি করে, তবে তার ওপর আল্লাহর, ফেরেশতাদের ও সমস্ত মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হবে। তার ফরজ বা নফল কিছুই কবুল হবে না।” (নাসায়ি, হাদিস : ৪৭৮৯)
এই হাদিস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছে—ন্যায়বিচার ব্যাহত করার যে কোনো প্রয়াস ফেরেশতাদের অভিশাপের কারণ হয়।
ইসলাম শুধু ইবাদত নয়, বরং এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানুষের পারস্পরিক আচরণ, নৈতিকতা ও ন্যায়বোধের প্রতিটি দিক নির্ধারিত। তাই একজন মুমিনের উচিত এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকা, যেগুলোর কারণে ফেরেশতাদের অভিশাপ বর্ষণ হয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা কুরআনে ইরশাদ করেছেন— “নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা অভিশাপ দেন সেই ব্যক্তিকে, যে সীমালঙ্ঘন করে।” (সূরা আল-আহজাব: ৫৭)
অতএব, আসুন আমরা সকলেই আমাদের কথাবার্তা, আচরণ ও কর্মকাণ্ডে সচেতন হই, যেন ফেরেশতাদের অভিশাপ নয়—বরং তাঁদের দোয়া ও রহমতের ছায়ায় আমরা থাকতে পারি।
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এসব গুরুতর কাজ থেকে বাঁচার তাওফিক দিন। আমিন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
 
				.png)
.png)
.png)



