ছবি: সংগৃহীত
শীতকাল মুমিনের আমলি জীবনকে আরও বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করে থাকে। তাকে প্রস্তুত করে পরকালীন জীবনের জন্য পাথেয় সঞ্চয়ের সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করতে। বাংলাদেশের ষড়ঋতুর মধ্যে শীতকাল অন্যতম। পৌষ-মাঘ এ দুমাস শীতকাল। এ ঋতু সম্পর্কে হাদিসে এসেছে এভাবে যে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘জাহান্নাম তার রবের কাছে অভিযোগ করে বলেছে, হে রব! আমার এক অংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন তিনি তাকে দুটি নিশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করেন। একটি নিশ্বাস শীতকালে, অপরটি গ্রীষ্মকালে। কাজেই তোমরা গরমের তীব্রতা এবং শীতের তীব্রতা পেয়ে থাক’।
শীতকাল মুমিনের জন্য আমলের বসন্ত ঋতু। ইবনু মাসঊদ (রা.) বলেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। এতে রহমত নাজিল হয়। এর রাত কিয়ামকারীর (রাতে নফল সালাত আদায়কারীর) জন্য দীর্ঘ এবং এর দিন সিয়াম পালনকারীর জন্য ছোট’। মুমিন ইবাদতে মশগুল থেকে পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ে এ মৌসুম কাজে লাগায়। যেভাবে বসন্ত মৌসুমে পশু-পাখিরা মাঠে-ময়দানে ঘুরে-ফিরে খাবার সংগ্রহ করে খেয়ে শরীরটা মোটাতাজা করে থাকে।
ইবাদতের বসন্তকাল হলো শীতকাল। শীতে সারা দেশে ওয়াজ-নসিহত, তালিমি বৈঠক, মাসিক তাবলিগি ইজতেমা, ইসলামি সম্মেলন, বার্ষিক তাবলিগি ইজতেমা ইত্যাদি কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। অন্যান্য মৌসুম অপেক্ষা শীতে গভীর ইলম অন্বেষণ ও দীর্ঘ গবেষণার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। প্রসঙ্গত, ইমাম শাফেঈ (রহ.)-এর কবিতাটি উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, ‘তীব্র কষ্ট স্বীকারে উচ্চমর্যাদা লাভ করা যায়। আর যে ব্যক্তি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে চায়, সে যেন রাত জাগরণ করে’।
আল্লাহর প্রিয় বান্দারা বছরজুড়ে এ বরকতপূর্ণ সময়ের প্রতি যত্নবান থাকেন। তাদের কাছে রাত ছোট ও বড় হওয়ার মধ্যে তেমন কোনো তারতম্য নেই। তারা গ্রীষ্মকালের ছোট রাতেও অল্প সময় ঘুমিয়ে বিছানা ত্যাগ করেন এবং রাতের নিস্তব্ধ নীরবতায় আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে যান। শেষ রাতে সালাত পড়েন, ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তওবা করেন। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রাণভরে কাকুতিভরা কণ্ঠে আল্লাহর সমীপে উভয় জগতের সফলতার জন্য দোয়া করেন। রাত ছোট হওয়ায় বরং তাদের ইবাদতের তৃষ্ণা থেকে যায়। ফলে শীতের দীর্ঘ রাতে তারা এ তৃষ্ণা নিবারণ করতে সক্ষম হন এবং আত্মিক প্রশান্তি লাভ করেন। শীতকালে রাত বেশ দীর্ঘ হয়। এশার পর তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লে সহজে শেষ রাতে ওঠা সম্ভব হয়। সব মুমিনের চেষ্টা করা উচিত শীতকালে এ সুবর্ণ সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়। হাসান বসরি (রহ.) বলেন, ‘কতইনা উত্তম সময় মুমিনের জন্য শীতকাল! এর রাত দীর্ঘ, যাতে সে (সালাতে) দণ্ডায়মান হয়। এর দিন ছোট, যাতে সে সিয়াম পালন করে’। আর যারা রাতে কিয়াম ও দিনে সিয়াম পালন করেন ওইসব মুমিনের প্রশংসায় আল্লাহ বলেন, ‘তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত’। ‘এবং রাত্রির শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত’ (যারিয়াত ৫১/১৭-১৮)। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কিয়ামুল লাইল (রাতের সালাত) আদায় করা উচিত। কেননা রাতে ইবাদত করা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের রীতি, তোমাদের জন্য প্রতিপালকের নৈকট্য লাভের সুযোগ এবং পাপরাশি মোচনকারী ও পাপ থেকে বিরত থাকার অন্যতম মাধ্যম’।
শীতকাল নফল সিয়াম রাখার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। শীতের সময় দিন সংক্ষিপ্ত হয় এবং রাত প্রলম্বিত হয়। শীতকালের দিনের বেলা সিয়াম রাখলেও ছায়েম ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয় না; তেমন তৃষ্ণা অনুভব করে না। যারা নফল সিয়াম রাখতে চান, কিন্তু গরমকালে বেশি তৃষ্ণার্ত হওয়া এবং দিন বড় হওয়ায় রাখতে পারেন না, শীতকাল তাদের জন্য এক অমূল্য সুযোগ। তাই আমরা এসময় বেশি পরিমাণে সিয়াম রাখতে পারি।
অসহায় শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটা মহা সুযোগ চলে আসে এ শীতকালে। প্রচণ্ড শীতে অসংখ্য আশ্রয়হীন মানুষ কষ্ট পায় শীতবস্ত্রের অভাবে। বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইসলামের সুমহান আদর্শগুলোর অন্যতম। তাই মানবিক ও ইসলামিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে এসব অসহায় মানুষের পাশে সাধ্যমতো দাঁড়ানো উচিত। কারণ আল্লাহর দয়া-ভালোবাসা পেতে হলে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করতে হবে। রাসূল (সা.) বলেন, ‘দয়াশীলদের ওপর দয়াময় আল্লাহ অনুগ্রহ করেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



