 
					ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা আংশিকভাবে শিথিল করেছে, যাতে অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে প্রযুক্তিগত বা কারিগরি অসুবিধায় পড়া করদাতারা আরও কিছুটা সময় পান। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির করদাতা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত কাগুজে (হার্ডকপি) বা অফলাইন পদ্ধতিতে রিটার্ন দাখিলের অনুমতি পাবেন—যদি তারা অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে বাস্তবিকভাবে অক্ষম হন এবং এ বিষয়ে যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করতে পারেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক বিশেষ আদেশে এই সময় বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী ৩১ অক্টোবরের সময়সীমা আরও দুই সপ্তাহের বেশি বাড়ানো হলো।
আয়কর আইন, ২০২৩-এর ধারা ৩২৮-এর উপ-ধারা (৪) অনুযায়ী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ইতোমধ্যে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করেছে সকল স্বাভাবিক ব্যক্তি করদাতার জন্য। অর্থাৎ, করদাতাদের এখন www.etaxnbr.gov.bd পোর্টালের মাধ্যমে ই-রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এর ফলে ম্যানুয়াল বা হার্ডকপি রিটার্নের যুগ কার্যত শেষ হয়ে আসছে।
তবে চার শ্রেণির বিশেষ করদাতাকে এই বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এসব বিশেষ করদাতা শ্রেণির মধ্যে রয়েছেন—
১. প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক, যারা দেশে অবস্থান করছেন না;
২. প্রবীণ নাগরিক, যারা বয়সজনিত কারণে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কাজ করতে অসুবিধায় পড়েন;
৩. দূরবর্তী বা ইন্টারনেট সুবিধাহীন এলাকার করদাতা;
৪. শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতাসম্পন্ন ব্যক্তি, যারা অনলাইনে রিটার্ন পূরণ ও জমা দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন না।
এই চার শ্রেণির বাইরে থাকা সব করদাতার জন্য ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক রাখা হলেও, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে অনেক করদাতা প্রথমবারের মতো অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে গিয়ে নানা প্রযুক্তিগত জটিলতায় পড়েছেন। কেউ কেউ ই-রিটার্ন সিস্টেমে নিবন্ধন করতে পারছেন না, আবার অনেকের ক্ষেত্রে তথ্য যাচাই ও ই-ট্যাক্স পোর্টালে প্রবেশ করতে সমস্যা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে এনবিআর বিশেষ আদেশের মাধ্যমে জানিয়েছে, যারা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে বাস্তবিকভাবে অসমর্থ, তারা ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট উপকর কমিশনারের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপত্রে অনলাইনে রিটার্ন দিতে না পারার যৌক্তিক কারণ স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
পরে সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত বা যুগ্মকর কমিশনারের অনুমোদনক্রমে ওই করদাতা কাগুজে রিটার্ন দাখিলের অনুমতি পাবেন। এই অনুমতি শুধুমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী এবং অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচিত হবে, যা আগামী বছরগুলোতে আর প্রযোজ্য নাও থাকতে পারে।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বছর প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করার ফলে একদিকে কর প্রশাসন আরও স্বচ্ছ ও দক্ষ হবে, অন্যদিকে করদাতাদের জন্যও সময় ও শ্রম বাঁচবে। তবে বাস্তবায়নের শুরুতে কিছু কারিগরি প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়া স্বাভাবিক।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর প্রায় ৪০ লাখ ব্যক্তি করদাতা রিটার্ন দাখিল করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে জমা দেবে। ইতোমধ্যে eTaxNBR পোর্টালে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়িয়েছে।
একজন ঊর্ধ্বতন কর কর্মকর্তা বলেন, “অনলাইনে রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়াকে শতভাগ কার্যকর করতে এনবিআর কাজ করছে। তবে অনেক করদাতা নতুন সিস্টেম বুঝতে না পারায় বা সার্ভার সমস্যায় পড়ায় তাদের জন্য এই সময় বাড়ানো হয়েছে। এটি করদাতাদের সুবিধার জন্যই দেওয়া একটি মানবিক সিদ্ধান্ত।”
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের কর প্রশাসনে ডিজিটাল রূপান্তর একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। ই-রিটার্নের মাধ্যমে আয়কর দাখিল প্রক্রিয়া স্বচ্ছ, সময়সাশ্রয়ী এবং দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে সিস্টেমটি পুরোপুরি স্থিতিশীল করতে পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত সহায়তা ও ব্যবহারকারী-বান্ধব ইন্টারফেস নিশ্চিত করা জরুরি।
একই সঙ্গে করদাতাদের প্রশিক্ষণ, সচেতনতা এবং সহায়তা কেন্দ্র বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সারসংক্ষেপে
- 
	অনলাইনে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সকল ব্যক্তি করদাতার জন্য 
- 
	চার শ্রেণির বিশেষ করদাতা এ বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন 
- 
	অনলাইনে রিটার্ন দাখিলে অসুবিধায় পড়লে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে 
- 
	লিখিত আবেদন ও অনুমোদনক্রমে কাগুজে রিটার্ন দাখিল করা যাবে 
- 
	এনবিআর বলছে, এটি অস্থায়ী ব্যবস্থা, ভবিষ্যতে পুরোপুরি ডিজিটাল ব্যবস্থাই কার্যকর হবে 
নতুন নির্দেশনায় করদাতাদের প্রতি এনবিআর আহ্বান জানিয়েছে—যত দ্রুত সম্ভব অনলাইনে নিবন্ধন সম্পন্ন করে eTaxNBR পোর্টালের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন জমা দিন, যাতে সময়মতো কর নির্ধারণ ও স্বীকৃতি প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়।
বাংলাবার্তা/এসজে
 
				.png)
.png)
.png)



