ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে একই জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বিপরীতে ১০টির বেশি সিম ব্যবহারের সুযোগ আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) পর্যন্তই। এর পর থেকে যেসব মোবাইল নম্বর এই সীমা অতিক্রম করবে, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
বিটিআরসি জানিয়েছে, একটি এনআইডির বিপরীতে সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিবন্ধনের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে অনেক আগেই। তবে বহু গ্রাহক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে একাধিক সিম রেজিস্ট্রেশন করে ফেলেছিলেন, যার সংখ্যা অনেক ক্ষেত্রে ২০, এমনকি ৩০-এও পৌঁছেছে। সেসব অতিরিক্ত সিম ব্যবহারের কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি, অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ও ভুয়া পরিচয়ে সেবা গ্রহণের ঘটনা বাড়ছিল। সেই কারণেই এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
বিটিআরসির এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে যার যার এনআইডির বিপরীতে রেজিস্টারকৃত অতিরিক্ত সিমগুলো ডি-রেজিস্টার বা মালিকানা পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ, একজন গ্রাহক চাইলে নিজের পছন্দমতো ১০টি সিম রেখে বাকি সিমগুলো সংশ্লিষ্ট অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার বা সেবাকেন্দ্রের মাধ্যমে বাতিল করতে পারবেন। নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার পর অতিরিক্ত সিমগুলো কমিশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, যেসব গ্রাহক জানেন না তাদের এনআইডিতে কতটি সিম নিবন্ধিত আছে, তারা সহজেই তা জানতে পারবেন। এজন্য যেকোনো মোবাইল অপারেটর—গ্রামীণফোন, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংক বা টেলিটক—থেকে *১৬০০১# ডায়াল করতে হবে। এরপর নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্রের শেষ চারটি সংখ্যা পাঠাতে হবে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ফিরতি এসএমএসে জানিয়ে দেওয়া হবে, ওই এনআইডিতে মোট কয়টি সিম নিবন্ধিত রয়েছে এবং কোন কোন অপারেটরের সিম তা।
বিটিআরসি বলছে, দেশের নিরাপত্তা ও মোবাইল নেটওয়ার্কের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অভিযোগ করে আসছিল যে, একটি এনআইডির বিপরীতে একাধিক সিম ব্যবহারের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক অপরাধী ভুয়া পরিচয়ে যোগাযোগ রক্ষা করছে, প্রতারণা ও অর্থনৈতিক জালিয়াতির মতো অপরাধ করছে। এমনকি সাইবার অপরাধ, অনলাইন প্রতারণা, মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতি এবং চাঁদাবাজির অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, অপরাধীরা একাধিক নাম-পরিচয়ে নিবন্ধিত সিম ব্যবহার করছে।
এ পরিস্থিতিতে মোবাইল সেবা ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও দায়বদ্ধ করতে ১০ সিম সীমা কার্যকর করার উদ্যোগ নেয় বিটিআরসি। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, গ্রাহকদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়েছে—প্রথমে নির্দেশনা জারি করা হয় আগস্টে, পরে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে একাধিকবার স্মরণ করানো হয়। তবু অনেক গ্রাহক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন আর সময় বাড়ানো হবে না।
বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিটি এনআইডির বিপরীতে নিবন্ধিত সিমের তথ্য ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষে দৈবচয়নের মাধ্যমে অতিরিক্ত সিমগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। এতে কারও নেটওয়ার্ক সেবা বন্ধ হলেও কমিশন দায়ী থাকবে না।”
এদিকে মোবাইল অপারেটরগুলোও এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রস্তুত রয়েছে। তারা গ্রাহকদের এসএমএস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বারবার সতর্ক করছে, যাতে কেউ অসাবধানতাবশত নিজের প্রাথমিক নম্বর বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে না পড়েন।
গ্রামীণফোনের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা গ্রাহকদের বারবার অনুরোধ করছি যেন তারা *১৬০০১# ডায়াল করে নিজেদের সিম সংখ্যা যাচাই করেন এবং যেগুলো ব্যবহার করেন না, সেগুলো আজকের মধ্যে বাতিল করে ফেলেন। সময়সীমা শেষ হলে বিটিআরসি সরাসরি সেগুলো বন্ধ করবে।”
রবি ও বাংলালিংকের কর্মকর্তারাও জানান, বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর থেকে ১০টির বেশি নিবন্ধিত সিম আর কার্যকর থাকবে না। তারা বলছেন, অনেক গ্রাহক নিজে জানেন না যে তাঁর নামেই একাধিক সিম খোলা রয়েছে—অনেক সময় দোকান বা বিক্রেতারা ভুলবশত অন্যের এনআইডি দিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন করেছে। তাই শেষ মুহূর্তে যাচাই করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিটিআরসির এই উদ্যোগ তথ্যনিরাপত্তা ও টেলিযোগাযোগ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে সক্রিয় সিমের সংখ্যা ১৯ কোটির বেশি, অথচ প্রকৃত গ্রাহক ১১ থেকে ১২ কোটির মতো। অর্থাৎ, একাধিক সিম একসঙ্গে ব্যবহারের কারণে প্রকৃত পরিসংখ্যান ও নিয়ন্ত্রণে জটিলতা তৈরি হয়।
আজকের পর থেকে ১০টির বেশি সিম ব্যবহারের সুযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে সেই জটিলতা অনেকটাই দূর হবে বলে মনে করছে বিটিআরসি।
সংস্থাটি গ্রাহকদের আবারও সতর্ক করে জানিয়েছে—বৃহস্পতিবারের (৩০ অক্টোবর) পর কেউ যদি নিজের প্রাথমিক নম্বর বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন, তবে দায় তার নিজের অবহেলার। তাই শেষ সময়ের আগেই যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



