
ছবি: সংগৃহীত
সরকারের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ পুনঃসংশোধনের মাধ্যমে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) সংক্রান্ত সমস্ত মামলা বাতিল করা হচ্ছে। এতে ইতিমধ্যেই রেহাইপ্রাপ্ত বা মামলা চলমান থাকা সব ব্যক্তি মামলার দায় থেকে মুক্তি পাবেন।
আজ শুক্রবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল নিজস্ব ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভেরিফায়েড পেজে তিনি লিখেছেন, “গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ২০১৮ সালের ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অধীনে দায়ের হওয়া সব মামলা (স্পিচ অফেন্স) বাতিল করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে ওই আইনে সাজাপ্রাপ্ত ও মামলায় অভিযুক্ত সবাই মামলার দায় থেকে মুক্তি পাচ্ছেন।”
সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। বৈঠকটি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর ৫০ ধারা সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে।
এই সংশোধনের ফলে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে যে কোনো ধরনের মামলা, সাজা বা অভিযোগ বর্তমানে চলমান থাকুক বা ইতিমধ্যেই রেহাইপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের উপর প্রযোজ্য – সবই বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে মামলার সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট তদন্তও বন্ধ করা হবে।
উপদেষ্টা পরিষদের সভায় মোট ১১টি অধ্যাদেশ এবং তিনটি নতুন প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এসব পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল আইন ও সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়মাবলীর সংশোধন ও আধুনিকীকরণের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, “এই পদক্ষেপ সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল আইন প্রয়োগে ন্যায়, স্বচ্ছতা এবং মানবাধিকার রক্ষার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করবে যে, ডিজিটাল আইন ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর অযাচিত চাপ সৃষ্টি হবে না এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তদন্ত কার্যকর ও সুবিন্যস্তভাবে পরিচালিত হবে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার ব্যাপক বাতিলাদেশ আইন-প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় একটি নতুন দিক উন্মোচন করছে। এর মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে সাইবার নিরাপত্তা আইনকে মানবাধিকার সম্মত ও প্রজন্মোচিত করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সাজাপ্রাপ্ত ও মামলা চলমান ব্যক্তিরা ন্যায়বিচারের আওতায় রক্ষা পাবেন, যা দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং সামাজিক স্বচ্ছতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও, এই সংশোধন আইনের মাধ্যমে সরকারকে ডিজিটাল তথ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সুরক্ষা এবং স্বাধীনতার মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করবে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন অধ্যাদেশটি অভিযোগ ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা এবং মানবাধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করবে।
এই পদক্ষেপের ফলে দেশের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ডিজিটাল আইন প্রয়োগের কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে। সরকার আশা করছে, সংশোধিত অধ্যাদেশের মাধ্যমে নাগরিকদের ডিজিটাল অধিকার রক্ষা করা যাবে এবং একই সঙ্গে ডিজিটাল অপরাধের প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও কার্যকরভাবে পরিচালিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ