
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ও ভারতের চলচ্চিত্রে সমান জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। অভিনয়ের নৈপুণ্য, ব্যক্তিত্ব, স্টাইল ও বয়সকে হার মানানো সৌন্দর্য—সব মিলিয়ে তিনি আজ দুই বাংলার দর্শকদের কাছে এক অনন্য নাম। কিন্তু জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে নানা বিতর্ক ও গুজবও তাকে ঘিরে রাখে। এর মধ্যে অন্যতম প্রশ্ন—তিনি কি প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন? সম্প্রতি এক পডকাস্ট অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে এ নিয়েই মুখ খুললেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্লাস্টিক সার্জারি কোনো নতুন বিষয় নয়। সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য কিংবা ক্যারিয়ারের প্রয়োজনে অনেকে এর আশ্রয় নেন। মার্কিন পপ তারকা কার্ডি বি, বলিউডের শিল্পা শেঠি, আনুশকা শর্মাসহ অনেকেই প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন, তারা বিভিন্ন সৌন্দর্যবর্ধনমূলক সার্জারি করিয়েছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
তবে ঢালিউডে বিষয়টি এখনো ট্যাবু হিসেবেই বিবেচিত। স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে কেউ কেউ প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন বলে গুঞ্জন শোনা গেলেও, খুব কমই কেউ প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খোলেন। সেই প্রেক্ষাপটে জয়া আহসানের সাম্প্রতিক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
সম্প্রতি জনপ্রিয় এক পডকাস্ট শোতে উপস্থিত হয়ে ব্যক্তিগত জীবন, কাজ এবং সমালোচনা—সবকিছু নিয়েই খোলামেলা আলোচনা করেন জয়া। কথোপকথনের এক পর্যায়ে যখন তাকে প্লাস্টিক সার্জারি প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হয়, জয়া হাসিমুখে বলেন, “মানুষ বলে, আমার পুরো শরীর নাকি প্লাস্টিক সার্জারি করা। আমি শুনেছি—আমার নাকি ‘হেড টু টো’, মানে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সার্জারি করা হয়েছে!”
তিনি আরও যোগ করেন, “মানুষ ভাবে আমি এগুলা দেখি না—বোটক্স, এটা-সেটা করি—এমন মন্তব্য পড়ে। কিন্তু আমি মাঝেমধ্যে দেখি। আমাদের দেশের পুরুষদের কমেন্ট বক্স দেখলেই তাদের মানসিক অবস্থা বোঝা যায়।”
তবে প্রশ্নের জবাবে জয়া স্পষ্ট করে বলেননি, তিনি আসলে প্লাস্টিক সার্জারি করেছেন কিনা। এক প্রশ্নে তিনি রহস্য রেখে বলেন, “এটা খুব দরকার ছিল। ভালো হয়েছে তো, পচানি খাইনি। সব সময় সব কিছুতে সো কল্ড সাকসেস হব? সব কিছু ভালো ভালো, ভুল করা যাবে না? ভুল করেছি, সেটা বলব না। আমার জীবনে কোনো কিছু ভুল না। সেটাই নিয়ে আজকের আমি।”
এই বক্তব্যে স্পষ্ট জয়া তার ব্যক্তিগত জীবনের কিছু বিষয় নিয়ে দ্ব্যর্থতা বজায় রাখতে চান। তার কথার ভেতরে লুকিয়ে ছিল আত্মবিশ্বাস এবং জীবনের ভুল থেকে শেখার দর্শন।
এ সময় উপস্থাপক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, অনলাইনে হওয়া ট্রল ও নেতিবাচক মন্তব্য নিয়ে তিনি কীভাবে সামলান। জয়া তখন হেসে বলেন, “আমাদের দেশে মানুষ বিনা কারণে ট্রল করতে পছন্দ করে। ২০১৬ সালে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী ২’-এর ‘মারোওও’ সংলাপের জন্য কত হাসাহাসি হয়েছিল! পরে ‘উৎসব’ সিনেমায়ও আবার সেই সংলাপ নিয়ে ট্রল করা হয়েছে। আমি হাসতাম, কারণ আমি জানি, এটা আমার কাজেরই অংশ।”
জয়া আহসান দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে কলকাতার সিনেমায় নিয়মিত কাজ করছেন। দুই বাংলার চলচ্চিত্রের এক সেতুবন্ধন হয়ে উঠেছেন তিনি। তার অভিনীত সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘তাণ্ডব’, ‘উৎসব’, ‘ডিয়ার মা’, এবং ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’। এসব ছবিতে তিনি কখনও মায়ের চরিত্রে, কখনও বা জটিল মানসিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত নারীর ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে তার নতুন সিনেমা ‘ফেরেশতে’, যেখানে তিনি অভিনয় করেছেন এক বাস্তবধর্মী সামাজিক গল্পে। একই সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়েছে তার দুটি আলোচিত কাজ—‘জয়া আর শারমিন’ এবং ‘নকশীকাঁথার জমিন’।
চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মতে, জয়া আহসান শুধু একজন অভিনেত্রী নন, বরং একজন সচেতন শিল্পী—যিনি নিজের প্রতিটি সিদ্ধান্ত ও উপস্থিতি নিয়ে ভেবে কাজ করেন। তার বয়স, সৌন্দর্য কিংবা পরিবর্তন নিয়ে যতই আলোচনা হোক না কেন, তিনি নিজেকে প্রতিনিয়ত নতুনভাবে প্রকাশ করতে জানেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলেছেন, জয়ার এই বক্তব্য সমাজে এক ধরনের ইতিবাচক বার্তা দেয়—নিজেকে যেমন, তেমনভাবে ভালোবাসা এবং বিচারহীনভাবে নিজের ভুল বা পরিবর্তনকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকা উচিত।
সবশেষে, জয়ার নিজের কথাতেই বিষয়টি সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে— “আমার জীবনের সব অভিজ্ঞতাই আমাকে আজকের জয়া বানিয়েছে। কেউ যদি মনে করে আমি পরিবর্তন হয়েছি, সেটা ঠিকই আছে। মানুষ তো সময়ের সঙ্গে বদলায়।”
এভাবেই তিনি আবারও প্রমাণ করলেন—তার সৌন্দর্য শুধু মুখে নয়, চিন্তায়ও সমান দীপ্ত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ