
ছবি: সংগৃহীত
বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আবারও রাজপথে নেমেছেন। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতাসহ মৌলিক আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধির দাবিতে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর তারা জাতীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
শিক্ষক নেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কাছে তাদের এই দাবি জানানো হলেও কোন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন বৈষম্য ও আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আশ্বাস এলেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি।
রোববার দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায়ের কর্মসূচি পালন করছিলেন। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতার দাবিতে তারা প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন। এ সময় পুলিশের বাধা ও শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
শিক্ষকরা দাবি করেন, পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে অযথা হস্তক্ষেপ করে, ফলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষকরা regroup করে শহীদ মিনারের উদ্দেশে যাত্রা করেন এবং সেখানেই অবস্থান নেন।
শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে শিক্ষক নেতারা ঘোষণা দেন, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা শহীদ মিনার ছেড়ে যাবেন না। পাশাপাশি সোমবার (১৩ অক্টোবর) থেকে সারাদেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দেন তারা।
বাংলাদেশ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন শহীদ মিনারে সমাবেশে বলেন, “আমরা রাষ্ট্রের সন্তান, জাতির ভবিষ্যৎ তৈরি করি। অথচ আজ আমরা নিজেদের প্রাপ্য পাওনার জন্য রাস্তায় বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা আমাদের মৌলিক অধিকার। এই ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু যারা মাঠে শিক্ষা দেন, তাদের জীবন কেমন চলছে, তা নিয়ে কেউ চিন্তা করে না।”
এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণ) হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন রোববার বিকেলে শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষকদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও নির্মম। দেশের মেধার ভরকেন্দ্র এই শিক্ষক সমাজকে অবমাননা করা মানে গোটা জাতিকে অপমান করা।”
এনসিপি নেতারা অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘মোনাফেক সরকার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই সরকার জনমুখী নয়, স্বার্থান্বেষী। তারা দেশের মেধাবী শিক্ষক সমাজের ন্যায্য দাবিকেও উপেক্ষা করছে।”
দলটির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “শিক্ষক সমাজের আন্দোলন কোনো ব্যক্তিগত বিষয় নয়—এটি একটি জাতীয় প্রশ্ন। আমরা এনসিপি হিসেবে এই আন্দোলনের পাশে আছি, থাকব। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শহীদ মিনারে শিক্ষক ভাই-বোনদের সঙ্গে আমরা একাত্ম থাকব।”
তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি এখনই তাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অচল হয়ে যাবে। এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করার দায় সরকারেরই।”
এ সময় এনসিপি নেতারা শিক্ষকদের প্রতি নির্দয় আচরণের জন্য সরকারের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।
দাবিগুলো কী
শিক্ষকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের তিনটি মূল দাবি রয়েছে:
১. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সরকারি চাকরিজীবীদের মতো বাড়ি ভাতা প্রদান।
২. চিকিৎসা ভাতা ও উৎসব ভাতা বৃদ্ধি।
৩. এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক ও কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় ধরে এসব দাবি অমীমাংসিত রয়েছে। সরকার একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো বাস্তবায়ন হয়নি।
কর্মবিরতির কারণে সোমবার (১৩ অক্টোবর) থেকে দেশের প্রায় ২৮ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে লাখো শিক্ষার্থী পাঠদান থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিষয়টি নজরে রাখছেন বলে জানা গেছে। তবে এখনও পর্যন্ত শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, সরকার যদি আলোচনায় না বসে, তাহলে তারা আরও বৃহত্তর কর্মসূচির দিকে যাবে। এতে সারা দেশের শিক্ষা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়তে পারে।
শেষ পর্যন্ত সরকার কীভাবে এই আন্দোলন মোকাবিলা করে, তা এখন সময়ই বলে দেবে। তবে আপাতত শহীদ মিনারে অবস্থানরত শিক্ষক সমাজের একটাই স্লোগান— “ন্যায্য দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফেরা নয়।”