
ছবি: সংগৃহীত
দেশের সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা খাতের জন্য একটি দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে কার্যকর হচ্ছে। ৬৫ হাজার ৫০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে এখন থেকে ১০ম গ্রেড অনুযায়ী বেতন-ভাতা প্রদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বাস্তবায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দ্বারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা-১৪ শাখা থেকে সহকারী সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শফিকুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে এই তথ্য অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হয়।
বর্তমানে দেশের প্রধান শিক্ষকদের বেতন-ভাতার গ্রেড নির্ধারণ করা হয়েছে তাদের প্রশিক্ষণগত যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে আছেন। কিন্তু নতুন নির্দেশনায় সব প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হবে, যা বেতন কাঠামোর সমন্বয় ও সম্মানজনক পদায়নের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বেতন ও ভাতা কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা আরও উৎসাহিত হবেন। বিশেষভাবে, এই পদোন্নতি দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতে নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আরও শক্তিশালী করবে।
তবে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণের বিষয়টি কিছু শর্ত পূরণের পরে কার্যকর হবে। চিঠিতে উল্লেখিত শর্তগুলো হলো—
অর্থ বিভাগের সম্মতি: গ্রেড পরিবর্তনের বেতন স্কেল বাস্তবায়নের আগে অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের অনুমোদন নেওয়া হবে।
বেতন স্কেল বাস্তবায়ন: অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ বেতন ও ভাতার স্কেল নির্ধারণের দায়িত্ব পালন করবে।
প্রশাসনিক উন্নয়ন সচিব কমিটির অনুমোদন: প্রশাসনিক কার্যক্রমের সমন্বয় ও আনুষ্ঠানিকতার জন্য সচিব কমিটির অনুমোদন নিতে হবে।
নিয়োগবিধির সংশোধন: গ্রেড উন্নীতকরণকে বিদ্যমান নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়োগবিধি সংশোধন করতে হবে।
এই শর্তগুলো পূরণের পরই ১০ম গ্রেড কার্যকর হবে, যা শিক্ষকদের চাকরির স্থায়িত্ব ও প্রশাসনিক দায়িত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে।
প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের ক্ষেত্রে নতুন চিঠিতে একটি সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকারি আদেশ জারি হওয়ার তারিখ থেকে ১৬ মাসের মধ্যে নির্ধারিত ‘Basic Training for Primary Teachers’ সম্পন্ন করতে হবে।
এই নির্দেশনার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হচ্ছে যে, সকল প্রধান শিক্ষক প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করার জন্য পর্যাপ্ত যোগ্যতা অর্জন করবেন। এতে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং স্কুল প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
চিঠিতে আরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় গ্রেড উন্নীতকরণের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবে। এরপর সরকারি আদেশের একটি কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগে পাঠানো হবে, যাতে প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও নিয়মবদ্ধ হয়।
এছাড়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সমস্ত প্রধান শিক্ষককে যথাযথভাবে এই পদোন্নতি এবং সংশ্লিষ্ট বেতন কাঠামো বিষয়ে অবহিত করতে হবে।
শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের ৬৫ হাজারের বেশি প্রধান শিক্ষকের গ্রেড উন্নীতকরণ প্রাথমিক শিক্ষা খাতের জন্য যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি শুধু শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে না, বরং বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষমতা ও নেতৃত্বের মানোন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ড. শফিকুর রহমান বলেন, “প্রধান শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের মূল চালিকাশক্তি। তাদের আর্থিক ও প্রশাসনিক স্বীকৃতি বাড়ানো মানে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা।”
নতুন গ্রেড কাঠামো কার্যকর হলে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। এই পদক্ষেপ শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষক প্রেরণা ও দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতের সার্বিক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষকদের গ্রেড উন্নীতকরণের মাধ্যমে নিশ্চিত হবে যে—শিক্ষকরা শুধু শিক্ষাদানেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না, বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনেও সমানভাবে সক্ষম হবেন।
যদিও গ্রেড উন্নীতকরণের প্রক্রিয়া এখনো কিছু আনুষ্ঠানিকতা ও শর্তের মধ্যে সম্পন্ন হবে, শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষক সমাজ আশা করছে, এটি প্রাথমিক শিক্ষা খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ শিক্ষকদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে, স্কুল প্রশাসনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের প্রাথমিক শিক্ষা খাতকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ দেবে।
সংক্ষেপে, ৬৫ হাজার ৫০২ প্রধান শিক্ষককে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটি শুধু শিক্ষক সমাজের জন্য নয়, বরং দেশের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্যও যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ