
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ২ জুন সোমবার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। সংসদ না থাকায় বাজেটটি এবার অধ্যাদেশের মাধ্যমে কার্যকর হবে। বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণার কথা রয়েছে। এবারের বাজেটে আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। এতে করে বেশ কিছু পণ্যের দাম বাড়তে ও কমতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
আমদানি শুল্কে নতুন স্তর, সম্পূরক শুল্কে সংযোজন
বর্তমানে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্কের ছয়টি স্তর বিদ্যমান—০%, ১%, ৫%, ১০%, ১৫% ও ২৫%। এবার নতুন করে ৩ শতাংশ হারে আরেকটি স্তর যুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তবে প্রধান খাদ্যপণ্য, সার, বীজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের ক্ষেত্রে বর্তমান শুল্কহার অপরিবর্তিত থাকবে।
অপরদিকে, সম্পূরক শুল্কে নতুন করে ৪০ শতাংশ হারে একটি নতুন স্তর যুক্ত হতে যাচ্ছে। বর্তমানে এই শুল্কের ১২টি স্তর বিদ্যমান, সর্বোচ্চ ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত।
যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে
চিনি, যানবাহন ও জ্বালানি খাতে শুল্ক হ্রাস:
পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টন ৪,৫০০ টাকা থেকে কমে ৪,০০০ টাকা হতে পারে।
১৬-৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক ১০% থেকে ৫% করা হতে পারে।
মাইক্রোবাস (১০-১৫ আসন) আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০% থেকে ১০% কমানোর প্রস্তাব।
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের শুল্ক ৫% থেকে ১%, অন্যান্য জ্বালানিতে ১০% থেকে ৩% করা হতে পারে।
শিল্প ও কাঁচামাল খাতে সুবিধা:
টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, মার্বেল ও গ্রানাইটের কাঁচামালে শুল্ক কমানো হতে পারে।
ক্রিকেট ব্যাট তৈরির কাঠ আমদানির শুল্ক ৩৭% থেকে ২৬% করা হতে পারে।
সয়াবিন মিল, কাগজশিল্প, চামড়াশিল্পের কাঁচামালে শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা।
বাটার বা মাখনে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার হতে পারে।
জাপানিজ সি ফুড স্ক্যালোপ আমদানিতে শুল্ক ১৫% থেকে ৫%।
প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব পণ্যে ছাড়:
সফটওয়্যার আমদানির শুল্ক ২৫% থেকে ১৫%।
সুপারি পাতা, নন-অ্যালকোহলিক জুস, ফেনোলিক রেজিন ও স্যান্ডপেপারের কাঁচামালের শুল্ক কমানো হতে পারে।
পিভিসি পাইপ ও কপার ওয়্যারের উপকরণ আমদানিতে শুল্ক কমছে।
শুল্ক আরোপ বা বৃদ্ধির কারণে যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
হেলিকপ্টার আমদানিতে নতুন করে ১০% শুল্ক বসানো হচ্ছে।
বেভারেজ, এলইডি ল্যাম্প, ওয়াটার পিউরিফায়ার, ফ্যান ইত্যাদি পণ্যে কাঁচামালে শুল্ক তিনগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।
সিগারেট পেপার আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে ১০০%, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৩৫০% পর্যন্ত করা হতে পারে।
সয়াবিন মিল, কাওলিন ক্লে, তামাক বীজ ও গ্রানাইট-মার্বেল আমদানিতে বাড়তি শুল্ক আসতে পারে।
সিমেন্টের ক্লিংকার আমদানিতে নির্ধারিত শুল্ক বাতিল করে অ্যাড ভ্যালোরেম ভিত্তিক শুল্ক বসানো হচ্ছে।
রেফারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে শুল্ক ১০%।
কম্পিউটার এক্সেসরিজে শুল্ক রেয়াত বাতিল করা হচ্ছে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার মোটরে শুল্ক ১% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করার প্রস্তাব।
বিদেশি চকলেট আমদানিতে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা।
কসমেটিকস ও অন্যান্য:
লিপস্টিক, মেকআপ, ফেসওয়াশ, খেলনা, তালা ইত্যাদির ন্যূনতম কাস্টমস মূল্য বাড়তে পারে, যার ফলে আমদানি খরচ বাড়বে।
স্যাটিন ফিতা তৈরিতে ব্যবহৃত ওভেন কাপড়ের ওপর শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
লক্ষ্য ও প্রভাব
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এই বাজেটের মূল লক্ষ্য রাজস্ব বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা। একই সঙ্গে জ্বালানি, খাদ্য ও শিল্প কাঁচামালের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সরবরাহ চেইন ঠিক রাখা অন্যতম উদ্দেশ্য।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এই শুল্ক পরিবর্তনের ফলে কিছু পণ্যের দাম কমবে এবং সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে, তবে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাজারে চাপ বাড়তে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ