
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) গুমের দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই পরোয়ানা বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “গতকাল বিকেলেই দুই মামলায় ৩০ আসামির বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইজিপি এবং ১২টি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।”
পরোয়ানা প্রাপ্য দপ্তরসমূহ
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো ১২টি দপ্তর হলো—
চিফ অব আর্মি স্টাফ
চিফ অব জেনারেল স্টাফ
এডজুটেন্ট জেনারেল (আর্মি হেডকোয়ার্টার)
ডিজি, ডিজিএফআই
ডিজি, এনএসআই
প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন)
সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়
ডিরেক্টর, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স
ডিরেক্টর, পার্সোনেল সার্ভিস ডিরেক্টরেট (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী)
কমান্ডেন্ট, আর্মি সিকিউরিটি ইউনিট
প্রভোস্ট মার্শাল
সিইও, আর্মি এমপি ইউনিট ফর ইনফরমেশন
চিফ প্রসিকিউটর জানান, পরোয়ানা পাঠানোর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বাহিনী প্রধানরা আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেবেন এবং আদালতের নির্দেশনার পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন।
এই দুই মামলায় ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ ডিজিসহ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই এখনও সরকারি পদে কর্মরত আছেন। তবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর তারা কোনো পদে থাকতে পারবেন না।
এর আগে, বুধবার (৮ অক্টোবর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর টিএফআই সেলে গুমের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একইসঙ্গে জেআইসিতে গুমের ঘটনায় আরেক মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
সেই দিন সকালে উভয় মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন।
মামলায় আসামিদের মধ্যে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন। ডিজিএফআই এবং সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফলে তাদের সরকারি দায়িত্বে থাকা অচল হয়ে যাবে। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিলের পর সংশোধিত আইন অনুযায়ী কোনো আসামি তার পদে থাকতে পারবে না। এটি আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অংশ।”
এই দুই মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ নিরীক্ষণ এবং মানবাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এছাড়া এটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা ও স্বাধীনতা প্রমাণ করছে।
সংশ্লিষ্ট বাহিনী প্রধানরা ইতোমধ্যেই পরোয়ানা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং প্রাথমিকভাবে আসামিদের অবস্থান খুঁজে বের করা ও গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয় নিশ্চিত করেছে, পরোয়ানা পাঠানো কার্যক্রম শেষ হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট সব বাহিনী প্রধানরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ আইনের শাসন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ স্থাপন করবে।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “অপরাধের দায় ব্যক্তি বহন করবে। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে এবং দেশের আইনের শাসন শক্তিশালী হবে।”
সংক্ষেপে, শেখ হাসিনাসহ ৩০ জনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনগত কার্যক্রমে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। এটি দেশের বিচার ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা এবং মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দিকনির্দেশনা স্থাপন করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ