
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ফুটবলের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করতে যাচ্ছে আগামী জুন মাস। যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মিডফিল্ডার হামজা চৌধুরী প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ঘরের মাঠে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামবেন। যদিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার অভিষেক ইতোমধ্যেই হয়ে গেছে, তবুও সেটা বিদেশের মাটিতে— তাই দেশের দর্শকদের সামনে তার প্রথম উপস্থিতি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিশেষ উন্মাদনা। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নিচ্ছে একাধিক আয়োজন, যার মধ্যে অন্যতম হলো অনলাইন টিকিট ব্যবস্থার প্রবর্তন।
আগামী ১০ জুন, ঢাকার ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হবে শক্তিশালী সিঙ্গাপুর। এই ম্যাচটিই হবে প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে হামজার হোম অভিষেক। এর আগে তিনি কুয়েতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে প্রথমবার বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামেন, তবে সেটি দেশের বাইরে হওয়ায় দেশের সমর্থকরা সরাসরি তার পারফরম্যান্স উপভোগ করার সুযোগ পাননি।
সেই আক্ষেপ ঘোচাতে বাফুফে চায় ঢাকার মাঠকে হামজার ‘উৎসবমুখর অভিষেকের মঞ্চ’ বানাতে। আর সেই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে একাধিক প্রস্তুতি।
বৃহস্পতিবার বাফুফের কম্পিটিশন কমিটির এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ১০ জুনের ম্যাচের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হবে। বৈঠকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এবং মাঠ ব্যবস্থাপনার দিকগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। মূল উদ্দেশ্য—সমর্থকদের আবার মাঠে ফিরিয়ে আনা এবং গ্যালারিতে একটি উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করা।
কম্পিটিশন কমিটির সদস্য এবং আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি তাজওয়ার আউয়াল বলেন,
“আমরা চাই সমর্থকরা মাঠে ফিরে আসুক, দলকে কাছ থেকে সমর্থন করুক। তাই ম্যাচকে ঘিরে আমরা গ্যালারি ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে টিকিট বণ্টন পর্যন্ত প্রতিটি বিষয়েই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, “এই ম্যাচের জন্য গ্যালারির (সাধারণ) ১৮ হাজার ৩০০টি টিকিট অনলাইনে বিক্রি হবে। টিকিটের দাম নির্ধারণ করবে মার্কেটিং কমিটি ও ফেডারেশন মিলে, যাতে একদিকে দর্শকদের কাছে এটি সহজলভ্য হয় এবং অন্যদিকে বাফুফেও টিকিট বিক্রি থেকে কিছু আয় করতে পারে।”
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে ৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে একটি আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচ, যেটি হতে পারে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নশিপ ক্লাব শেফিল্ড ইউনাইটেডে খেলা হামজার বাংলাদেশে খেলার প্রথম আনুষ্ঠানিক ম্যাচ। যদিও এখনও বাংলাদেশের সেই দিনের প্রতিপক্ষ নির্ধারিত হয়নি, তবে ফুটবল ফেডারেশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে—সুদানের জাতীয় দল হতে পারে সেই দিনের প্রতিপক্ষ।
এই ম্যাচটিও ঢাকায় আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে বাফুফের। ফলে হামজার ঘরের মাঠে আনুষ্ঠানিক অভিষেক হয়ে যেতে পারে এই প্রীতি ম্যাচেই। তবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচের মাহাত্ম্য বেশি হওয়ায় ১০ জুনকেই তার হোম অভিষেক হিসেবে দেখছে ফেডারেশন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ইংলিশ ফুটবলার বহুদিন ধরেই প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে পরিচিত মুখ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে লেস্টার সিটির হয়ে খেলে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা হামজা এখন খেলছেন শেফিল্ড ইউনাইটেডের হয়ে। তার বাংলাদেশের জাতীয় দলে যোগদানের বিষয়টি ছিল ঐতিহাসিক এবং আবেগঘন। ইতিমধ্যেই তার উপস্থিতিতে মিডফিল্ডে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে, এবং কোচিং স্টাফ থেকে শুরু করে সতীর্থরা তার পেশাদারিত্বে মুগ্ধ।
তার খেলা সরাসরি দেশের মাঠে উপভোগ করার সুযোগটা বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক রকম সৌভাগ্যের ব্যাপার বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ এমন ক্যালিবারের ফুটবলারদের ঘরোয়া ফুটবলে দেখার সুযোগ বাংলাদেশে খুবই কম।
বাফুফে আশা করছে, এই ম্যাচকে ঘিরে জাতীয় স্টেডিয়ামে দীর্ঘদিন পর দর্শকের ঢল নামবে। একই সঙ্গে, অনলাইন টিকিটিংয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো টেকসই ও সুশৃঙ্খল দর্শক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার এক বড় উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে।
তাজওয়ার আউয়াল বলেন, “আমরা এই ম্যাচকে শুধুমাত্র একটি ফুটবল ম্যাচ হিসেবে নয়, বরং এক উৎসব, এক অভিষেক, এক প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখতে চাই। জাতীয় দলের প্রতি মানুষের আগ্রহ আবার জাগিয়ে তুলতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।”
বাংলাদেশ বনাম সিঙ্গাপুর ম্যাচ শুধু একটি ফুটবল ম্যাচ নয়—এটি হতে যাচ্ছে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা, যেখানে প্রবাসী ও দেশীয় প্রতিভা একসূত্রে মিলিত হয়ে নতুন করে বাংলাদেশের ফুটবলের স্বপ্ন রচনা করতে চায়। হামজা চৌধুরীর ঘরের মাঠে সেই প্রথম পদক্ষেপটা যে কতটা ঐতিহাসিক হতে চলেছে, তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ