ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন দলগুলোর প্রার্থী তালিকা প্রকাশের হিড়িক, ঠিক সেই সময় দেশের অন্যতম ইসলামী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে—তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করতে আমরা সময় নিচ্ছি কারণ আমরা একা নির্বাচন করব না; বরং অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জাতীয় স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে ঐক্যের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।”
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ভোরে বিদেশ সফর শেষে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেই সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলাপের সময় তিনি এই তথ্য জানান। প্রায় দুই সপ্তাহের বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরা ডা. শফিকুর রহমানকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের শতাধিক নেতা-কর্মী।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে—“বিএনপি ইতিমধ্যেই তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে, জামায়াত কবে করবে?”—এর জবাবে জামায়াত আমির বলেন, “আমরা প্রায় এক বছর আগেই আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম আঞ্চলিক পর্যায়ে জানিয়েছি। বিভিন্ন জেলায় আমাদের সাংগঠনিক সভায় তালিকা অনুমোদনও হয়েছে। এখন শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে চূড়ান্ত ঘোষণা বাকি আছে, ইনশাল্লাহ সময়মতো তা জানানো হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যেহেতু আমরা এককভাবে নয়, বরং জাতীয় স্বার্থে অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সমন্বিতভাবে নির্বাচনে অংশ নেব, তাই সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করছি। আমাদের লক্ষ্য কেবল নির্বাচনে অংশ নেওয়া নয়, বরং জাতির সংকট মুহূর্তে একটি দায়িত্বশীল পরিবর্তনের পথে অংশীদার হওয়া।”
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলমান মতবিরোধ প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, “গণতন্ত্রে মতভেদ থাকা খুবই স্বাভাবিক। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। কিন্তু মতভেদ যেন বিভাজনে পরিণত না হয়—এই সচেতনতা আমাদের সকলের থাকা প্রয়োজন। জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই সংলাপ ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে বিশ্বাস করে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “রাজনীতি হলো মতের লড়াই, মনোভাবের প্রকাশ ও জনগণের আস্থা অর্জনের প্রতিযোগিতা। এখানে পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে। আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল একটি মুক্ত ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করুক।”
সম্প্রতি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মাসুদ সাঈদী মন্তব্য করেছিলেন—‘শত্রুরা বিএনপির সঙ্গে আমাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চায়’—এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা রাজনৈতিকভাবে পরিপক্ক দল। কে আমাদের বন্ধু, কে আমাদের বিভক্ত করতে চায়—তা আমরা জানি। জাতীয় স্বার্থে যাদের সঙ্গে সমঝোতা প্রয়োজন, তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভেদ নয়, ঐক্যই এখন দেশের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন।”
দলের আমির হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমি নিজে কোনো পদে নির্বাচিত হইনি, বরং আমার সহকর্মীরা আমার ওপর একটি ভার অর্পণ করেছেন। এটি একটি বিশাল দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে যেন আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি, সে জন্য সবার দোয়া চাই। আমি চাই দেশ ও দ্বীনের কল্যাণে যেন আমরা সবাই মিলে কাজ করতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, “জামায়াতে ইসলামীকে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে যুক্ত করতে আমরা সাংগঠনিকভাবে কাজ করছি। এই নির্বাচনে তরুণ ও শিক্ষিত প্রার্থীদের অংশগ্রহণও থাকবে।”
বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। তারা যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করছি—প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের সময়সীমা অন্তত ১৫ দিন বাড়ানো হোক। এতে লক্ষাধিক প্রবাসী ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।”
উল্লেখ্য, গত ১৯ অক্টোবর ডা. শফিকুর রহমান ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যান। সেখানে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ২২ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রে যান, যেখানে তিনি নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যে যান, যেখানে ব্রিটিশ মুসলিম কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
এই সফরের মাধ্যমে জামায়াতের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ জোরদার করার পাশাপাশি প্রবাসী সমর্থকদের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক শক্তিশালী হয়েছে বলে দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
দেশে ফেরার পর মঙ্গলবার ভোরে বিমানবন্দরে পৌঁছালে দলীয় নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে আমিরকে স্বাগত জানান। তারা বিমানবন্দরে “জামায়াতের নেতৃত্বে পরিবর্তনের সূচনা” স্লোগান দেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াত ইতোমধ্যে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৫০টিরও বেশি আসনে প্রার্থী নির্ধারণ করেছে। বাকি আসনগুলোতে সমন্বয় বা সমঝোতার সম্ভাবনা থাকায় ঘোষণা বিলম্বিত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দলটি তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে।
দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিটি বিভাগ থেকে কমপক্ষে একজন নারী প্রার্থী ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তরুণ প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন। পাশাপাশি জামায়াত এবার ধর্মীয় ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদেরও প্রার্থী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি, এনসিপি ও অন্যান্য মিত্র দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর জামায়াতের এই ঘোষণা আসলে নির্বাচনের চিত্র আরও স্পষ্ট হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, জামায়াত এখন নির্বাচনী ময়দানে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর দলটির আমির শফিকুর রহমানের ভাষায়— “আমরা সময়মতো, পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে যাব। আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ
				.png)
.png)
.png)



