
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যের দুই গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার সৌদি আরব ও জর্ডানে অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের জন্য বড় সুখবর এসেছে। দীর্ঘদিন ধরে বৈধতা না থাকা এবং নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে থাকা নারী শ্রমিকদের এবার নতুন করে স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। সৌদি আরব ইতোমধ্যে এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে, আর জর্ডানও সম্ভাবনা উন্মুক্ত রেখেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
সৌদি আরব সফর শেষে মঙ্গলবার (৬ মে) দেশে ফিরে ঢাকায় সাংবাদিকদের তিনি জানান, সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী (শ্রম) ড. আবদুল্লাহ এন আবুথনাইনের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তিনি বাংলাদেশি অবৈধ নারী শ্রমিকদের বৈধতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় জানা গেছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ বর্তমানে অবৈধ নারী শ্রমিকদের বৈধ করার একটি প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতে অনেক বাংলাদেশি পরিবারকে স্বস্তি দেবে।
ড. আসিফ নজরুল আরও জানান, তার সাম্প্রতিক সৌদি সফরের সময় সেখানে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড অকুপেশনাল হেলথ অ্যান্ড সেফটি কনফারেন্স-এর ফাঁকে তিনি জর্ডানের একজন মন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেও তিনি অবৈধ বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের বৈধতার বিষয়টি উত্থাপন করেন। জর্ডানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শ্রমিকরা যদি ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তবে তারাও বৈধতার আওতায় আসতে পারেন।
এ উদ্যোগ দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রমবিষয়ক কূটনীতির একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেক বছর ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে নারী শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে, কিন্তু নানা কারণে অনেকেই সেখানে অবৈধ অবস্থায় বসবাস ও কাজ করছেন। অনেক সময় নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার পর ভিসা নবায়ন না করায় কিংবা দালাল চক্রের প্রতারণার শিকার হয়ে তারা অবৈধ হয়ে পড়েন। এসব নারী শ্রমিকরা নিয়মিত পুলিশি হয়রানি, আটক কিংবা দেশে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে থাকেন।
এখন তাদের বৈধতার আওতায় আনা হলে তারা নিয়মিত শ্রম আইন ও সুরক্ষার আওতায় আসবেন, যা শুধু তাদেরই নয়, বাংলাদেশ সরকারের জন্যও একটি ইতিবাচক সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
উল্লেখযোগ্য যে, সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২০০৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সৌদি আরবে প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি নারী শ্রমিক নিয়োগ পেয়েছেন। একই সময়ে জর্ডানে নিয়োগ পেয়েছেন ২ লাখ ১১ হাজারের বেশি নারী শ্রমিক। এই বিপুল সংখ্যক নারীর মধ্যেই একটি বড় অংশ অবৈধ হয়ে পড়েছেন বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে।
এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু নারী শ্রমিকই নয়, জর্ডানে পুরুষ শ্রমিক নিয়োগও বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। এ নিয়ে আলোচনাও চলেছে সাম্প্রতিক সফরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা একদিকে যেমন শ্রমিকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা বাড়াবে, অন্যদিকে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারকে আরও স্থিতিশীল ও সম্প্রসারিত করবে। বৈধতা পাওয়ার পর শ্রমিকরা সেখানে থেকে নিয়মিত আয় পাঠাতে পারবেন, যা দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ