
ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরবৈরী পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ফের উত্তেজনার পারদ চরমে উঠেছে। নতুন করে অগ্নিসংযোগ হয়েছে ভারত-শাসিত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের সেনা স্থাপনাগুলিতে হামলার অভিযোগ ঘিরে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর এবং পাঞ্জাবের পাঠানকোট এলাকায় অবস্থিত তিনটি সামরিক ঘাঁটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় পাকিস্তানের দিক থেকে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। তবে এই অভিযোগকে 'সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ সরাসরি বলেছেন, “ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যর্থতা ঢাকতে তারা পাকিস্তানকে দায়ী করছে।”
ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে দেওয়া বিবৃতিতে জানিয়েছে, "উধমপুর, পাঠানকোট এবং জম্মুর সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সময়মতো তা শনাক্ত করে সফলভাবে প্রতিহত করেছে। কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।”
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার সময় আকাশে অজ্ঞাত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের উপস্থিতি ধরা পড়ে এবং সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের হুমকি সাড়া ব্যবস্থার মাধ্যমে তা নিষ্ক্রিয় করা হয়। মন্ত্রণালয় আরও দাবি করে, “এই হামলার পেছনে পাকিস্তানি সামরিক সংস্থার প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে। হামলাগুলো একাধিক দিক থেকে সমন্বিতভাবে চালানো হয়, যা স্পষ্টতই একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী তৎপরতা।”
এমন হামলার অভিযোগের পর থেকেই ভারতের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে। চণ্ডীগড় শহর কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমান হামলার সম্ভাব্য হুমকি বিবেচনায় শহরজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং রাত্রিকালীন সময়ে ব্ল্যাকআউট করা হচ্ছে। বিমান হামলা সংকেত হিসেবে বাজানো হচ্ছে সাইরেন।
জম্মুর রাজৌরি শহরের প্রশাসন এক নির্দেশনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের অপ্রয়োজনীয় আলো বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে এবং সম্ভাব্য হামলার ক্ষেত্রে আশ্রয়স্থলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেছে।
বিবিসির সংবাদদাতা দিব্যা আরিয়া জানান, জম্মু অঞ্চলের একাধিক শহরে রাতভর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ রাতেই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “মাঝরাতে বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়, এরপর চারদিকে শুধু অন্ধকার আর সাইরেনের শব্দ।”
বিস্ফোরণের প্রকৃতি বা উৎস সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট কোনো সরকারি ব্যাখ্যা আসেনি, তবে ভারতীয় সেনাবাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
ভারতের পক্ষ থেকে ওঠা এই হামলার অভিযোগকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ। তিনি বলেন, “কাশ্মীরে হামলার দায় পাকিস্তানের নয়। এই অঞ্চলের সামরিক উত্তেজনা বাড়িয়ে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছে দিল্লি। পাকিস্তান একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র, আমরা এমন উসকানিমূলক কার্যক্রমে বিশ্বাস করি না।”
পাকিস্তান সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, “ভারত যদি সত্যিকারভাবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, তাহলে উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা থেকে বিরত থাকবে। আমরা আমাদের সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন এক সময়ে যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ প্রায় স্তব্ধ এবং দু'দেশই অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে, তখন এমন হামলার অভিযোগ পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যদি এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে পাল্টা সামরিক উত্তেজনা তৈরি হয়, তাহলে তা গোটা উপমহাদেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া না এলেও, দিল্লি ও ইসলামাবাদের সাম্প্রতিক উত্তেজনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের সেনা ঘাঁটিতে হামলার এই অভিযোগ এবং পাকিস্তানের তা সরাসরি অস্বীকার নতুন করে এক টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রের মধ্যে। সাম্প্রতিক এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রবল বলে ধারণা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয়, এই অভিযোগে দিল্লি কী ধরনের কূটনৈতিক ও সামরিক প্রতিক্রিয়া জানায়, এবং ইসলামাবাদ কীভাবে তা মোকাবিলা করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ