
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আবারও এলো দীর্ঘ ছুটির সুখবর। ঈদুল ফিতরের মতো এবারের ঈদুল আজহাতেও টানা ছুটির ব্যবস্থা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ঈদুল আজহার দিন নির্ধারিত হলেও, সরকারিভাবে সম্ভাব্য তারিখ ধরে আগামী ৫ জুন (বুধবার) থেকে ১৪ জুন (শুক্রবার) পর্যন্ত ঈদ উপলক্ষে টানা ১০ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে সরকারি চাকরিজীবীরা পেতে যাচ্ছেন ঈদের আগ-পিছের মিলিয়ে দীর্ঘ ছুটির সুবর্ণ সুযোগ।
সচিবালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও এক পোস্টের মাধ্যমে জানান, “ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ১০ দিন সরকারি ছুটি থাকবে। তবে ১৭ ও ২৪ মে যেহেতু শনিবার, সেই দিনগুলোতে অফিস খোলা থাকবে।”
এই ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই তা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
পূর্বঘোষিত ছুটি ছিল ৬ দিন
ঈদুল আজহার ছুটি আগে ৬ দিন করে নির্ধারিত ছিল। সে অনুযায়ী, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল ৫ জুন এবং শেষ হওয়ার কথা ছিল ১০ জুন। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও চার দিন ছুটি যুক্ত হওয়ায় পুরোটা মিলিয়ে টানা ১০ দিনের বিশ্রামের সুযোগ তৈরি হলো। ফলে ঈদের আগে এবং পরে দূরপাল্লার যাতায়াত, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটানো এবং পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা সহজেই সম্পন্ন করতে পারবেন কর্মজীবীরা।
বিশেষ করে যেসব সরকারি কর্মচারী রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য বড় শহরে কর্মরত এবং গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে যান, তাদের জন্য এই দীর্ঘ ছুটি এক বিশাল স্বস্তি। ভোগান্তিমুক্ত ঈদযাত্রা ও ঈদপরবর্তী ফিরতি ভ্রমণ অনেকটাই আরামদায়ক হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
ঈদে ট্রেনযাত্রা ও যানবাহন ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্রস্তুতি
সরকারের ছুটির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেলওয়ে ও সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে আগাম টিকিট বিক্রির তারিখ ঘোষণা করেছে। ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি, বাসের অগ্রিম বুকিং এবং ফেরি সার্ভিস পরিচালনায় অতিরিক্ত জনবল মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ করে পশুবাহী ট্রাক ও সাধারণ যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ বিবেচনায় নিয়ে সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা জোরদার এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন পর্যায়ে সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
গত ঈদুল ফিতরের ছুটি ছিল ৯ দিন
উল্লেখ্য, গত ঈদুল ফিতরে (২০২৫ সালে) সরকারি ছুটি ছিল ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত। সেখানে মূল ঈদ ছুটি ছিল পাঁচ দিন। তবে ২৬ মার্চ ছিল স্বাধীনতা দিবসের সরকারি ছুটি এবং ২৭ মার্চ অফিস খোলা থাকলেও অনেকেই ছুটি নিয়ে টানা বিশ্রাম উপভোগ করেছেন। নির্বাহী আদেশে আরও একদিন বাড়ানোয় সেবার ছুটি দাঁড়ায় ৯ দিনে।
ঈদের ছুটি নিয়ে এমন প্রশস্ত সিদ্ধান্ত কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের মধ্যে মানসিক প্রশান্তি আনবে বলেও মন্তব্য করেছেন সরকারি প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমনকি অনেকে বলছেন, এই ধরনের দীর্ঘ ছুটি কর্মদক্ষতা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিক্রিয়া
সরকারি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও ছুটি বাড়ানোর চিন্তা করছে। যদিও সরকারিভাবে বেসরকারি খাতের ছুটি নির্ধারণ করা হয় না, তবু সাধারণত ঈদের মৌসুমে বেসরকারি ব্যাংক, কর্পোরেট অফিস, গার্মেন্টস ও অন্যান্য কারখানাগুলোও ন্যূনতম ৫ থেকে ৭ দিন ছুটি দিয়ে থাকে।
এই দীর্ঘ ছুটি দেশের পর্যটন শিল্পেও কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বিশেষ করে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, সিলেট, রাঙামাটি ও কুয়াকাটার মতো পর্যটন গন্তব্যগুলোতে ঈদের পরপরই ভ্রমণপিয়াসুদের ভিড় বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্ত দেশজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। শুধু সরকারি চাকরিজীবীই নন, বরং ভোগান্তিমুক্ত ঈদ উদযাপনের আশায় থাকা সব শ্রেণির মানুষ এর মধ্য দিয়ে স্বস্তি অনুভব করছেন। এখন সবার দৃষ্টি ঈদের দিন ঘোষণার ওপর, যা চাঁদ দেখার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ