
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় দীর্ঘদিন ধরে সচিবালয় এবং মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পৃথক নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির বিধিমালা চালু ছিল। এতে সমান যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দায়িত্ব পালনের পরও এই দুটি স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা ও বৈষম্যের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এই প্রেক্ষাপটে এবার তাদের জন্য অভিন্ন ও একীভূত নিয়োগ বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে, যাদের কাজ হবে নতুন বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করা এবং ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রদান।
নতুন এই বিধিমালার আওতায় বদলি ও পদোন্নতির নীতিমালাতেও আসছে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে মাঠ প্রশাসনের নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে এবং সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে—জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বদলি করা যাবে। এটি একটি বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কার, যা প্রশাসনের মধ্যে আন্তঃসংযোগ, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং দক্ষতা উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে ২০১৮ সালের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে প্রথমবারের মতো এই বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছিল। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের জন্য সচিবালয়ের কর্মচারীদের আদলে নিয়োগবিধি প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয় সেখানে। প্রস্তাবনার পর দীর্ঘ সময় আলোচনার পর অবশেষে এ বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলো।
বর্তমানে সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা তিনটি বিধিমালা চালু আছে। প্রথমটি হচ্ছে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় (ক্যাডারবহির্ভূত গেজেটেড কর্মকর্তা ও নন-গেজেটেড কর্মচারী) নিয়োগ বিধিমালা-২০১৪’, যা প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নন-ক্যাডারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দ্বিতীয়টি হলো জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের জন্য প্রযোজ্য নিয়োগবিধি। তৃতীয়টি বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য আলাদা একটি বিধিমালা।
সচিবালয়ের কর্মচারীরা পদোন্নতির সুযোগ পেয়ে উপসচিব (৫ম গ্রেড) পর্যন্ত যেতে পারেন। অন্যদিকে, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি এবং ইউএনও কার্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের পদোন্নতির সীমা সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) পদ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। এই পার্থক্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা পদোন্নতির বঞ্চনার অভিযোগ করে আসছেন।
বর্তমানে সচিবালয়ে প্রায় ১৩ হাজার নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই প্রশাসনিক কর্মকর্তা (AO) বা ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (PO) হিসেবে কাজ করছেন। এসব কর্মকর্তা পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী সচিব, জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব, এমনকি উপসচিব পদেও পৌঁছাতে পারেন।
যদি অভিন্ন বা একীভূত নিয়োগ বিধিমালা বাস্তবায়িত হয়, তাহলে বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সচিবালয় ও মাঠ প্রশাসনের মধ্যে কর্মকর্তাদের মুক্ত প্রবাহ ঘটবে। এতে শুধু পেশাগত স্বীকৃতিই বাড়বে না, প্রশাসনের দক্ষ ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গঠিত কমিটি খুব দ্রুত বৈঠকে বসবে এবং মাঠ ও সচিবালয় উভয়ের প্রতিনিধিত্ব ও প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বিধিমালার খসড়া প্রস্তুত করবে। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, দীর্ঘদিনের বৈষম্য দূর করে প্রশাসনের কাঠামোকে আরও কার্যকর ও একীভূত করতেই এ উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ