ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার পরপরই একাধিক বক্তব্য ও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সরব হয়ে উঠেছেন। দলটির দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন হিসেবে এই নিষেধাজ্ঞাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও তিনি দাবি করেছেন—এতটুকু যথেষ্ট নয়। বরং এটি একটি বৃহত্তর আন্দোলনের সূচনা মাত্র।
রবিবার (১১ মে) ভোরে নিজের ব্যক্তিগত ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে হাসনাত সোজাসাপ্টা লেখেন—“লীগ ধর, জেলে ভর”। এই মন্তব্যটি তার রাজনৈতিক অবস্থান ও বক্তব্যের প্রতিফলন হিসেবেই ধরা হচ্ছে। একই দিন ভোর ৪টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বিস্তৃত বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি জানান, “আমাদের তিনটি স্পষ্ট দাবি ছিল—আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা, দলগতভাবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার অন্তর্ভুক্তকরণ এবং জুলাই ঘোষণাপত্র জারি। আজ অন্তর্বর্তী সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আমাদের আন্দোলনের প্রথম ধাপ সফল করেছে।”
হাসনাতের ভাষ্য অনুযায়ী, সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, তাতে আওয়ামী লীগের সবধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার করার বিধান যুক্ত হওয়াকেও তিনি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে শুধু এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট নন হাসনাত। তিনি বলেন, “আমরা লক্ষ্য করেছি, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে অতীতে সরকার বারবার তালবাহানা করেছে। একই সঙ্গে শাপলা চত্বরে গণহত্যা সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত গণহত্যার বিচার দ্রুতগতিতে না হওয়া আমাদের আশঙ্কার জন্ম দেয়। অনেক আহত মানুষ মামলা দায়ের করতে পারছে না, থানা থেকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অথচ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি ছিল।”
সংবাদ সম্মেলনে হাসনাত আরো বলেন, “আমরা এখনো প্রত্যক্ষ করছি, দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে জুলাই যোদ্ধারা আক্রান্ত হচ্ছে। এমন অবস্থায় আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট অবস্থান এবং পদক্ষেপ জানতে চাই। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠামোগত সংস্কার ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি।”
হাসনাত দৃঢ়ভাবে বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত থাকলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ। এখন সময় এসেছে দ্রুত এই ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন রোডম্যাপ প্রকাশ করার। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে, এখন সেই নিষিদ্ধ দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং তাদের সদস্যদের আইনি অবস্থান কী হবে তা স্পষ্টভাবে জনগণের সামনে আনতে হবে।”
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে নানা মতপার্থক্য থাকলেও আওয়ামী লীগের প্রশ্নে কোনও বিভাজন নেই। এককথায়, আওয়ামী লীগের অধ্যায় ৫ আগস্টের পর বন্ধ হয়েছে এবং সেটি পুনরায় খোলার সুযোগ নেই। যদি কেউ রিফর্ম বা সংশোধনের নামে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন, তাহলে জুলাইয়ের ঐক্যবদ্ধ শক্তি তার সর্বাত্মক প্রতিরোধ করবে।”
হাসনাতের এই বক্তব্য এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার ঝড় বইছে। বিশেষ করে তার বক্তব্যে ব্যবহৃত “লীগ ধর, জেলে ভর” স্লোগানটি ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এবং রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনীতিতে একটি যুগান্তকারী মোড় এনে দিয়েছে। তবে সামনে আরও কতটা দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হয় এবং এর বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হয়, সেটিই দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



