
ছবি: সংগৃহীত
শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা যাবে না। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা আদেশে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। আদেশটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কাছে পাঠানো হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ছুটির তালিকা অনুযায়ী এ বছর দুর্গাপূজা, বিজয়া দশমী, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, প্রবারণা পূর্ণিমা এবং লক্ষ্মীপূজা একই সময়ের মধ্যে পড়েছে। তাই ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত অবকাশকালীন ছুটি অনুমোদন করা হয়েছে।
অর্থাৎ, এই সময়কালে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ছুটির মেয়াদে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনগুলো যুক্ত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা একটানা দীর্ঘ সময় পড়াশোনার বাইরে থাকবে।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই দেবীপক্ষের সূচনা হয়। পরদিন অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় প্রতিপদ তিথি, যা দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিক সূচনা।
-
২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠী
-
২৯ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী
-
৩০ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমী
-
১ অক্টোবর মহানবমী
-
২ অক্টোবর বিজয়া দশমী
সাধারণত বিজয়া দশমীতে সরকারি ছুটি থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছুটির তালিকা অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোতে মহাষষ্ঠী অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ছুটি শুরু হয়ে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। এই আট দিনের মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত থাকবে। ৮ অক্টোবর থেকে ক্লাস শুরু হবে।
অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি কলেজে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ছুটি শুরু হয়ে চলবে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত। এর ফলে কলেজগুলোতে কার্যত ১০ দিন পাঠদান বন্ধ থাকবে। ১০ এবং ১১ অক্টোবর শুক্রবার ও শনিবার পড়ায় ক্লাস শুরু হবে ১২ অক্টোবর।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত ছুটির তালিকা প্রতিষ্ঠান নিজে থেকে নির্ধারণ করে। তবে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে—২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। শিক্ষার্থীরা যাতে ধর্মীয় উৎসব যথাযথভাবে পালন করতে পারে, সেজন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে সাধারণত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলে বার্ষিক বা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার কারণে পরীক্ষার সময়সূচি পরিবর্তন করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, তারা ইতিমধ্যেই পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত করেছিল। কিন্তু নতুন নির্দেশনার কারণে এখন আবার সময়সূচি পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এতে পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।
এবার দুর্গাপূজার ছুটির মধ্যে কেবল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবই নয়, বরং অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
-
ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম (মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিন)
-
প্রবারণা পূর্ণিমা (বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বড় উৎসব)
-
লক্ষ্মীপূজা (হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আরেকটি উৎসব)
ফলে একই সময়ে দেশের প্রায় সব ধর্মের মানুষই তাদের নিজ নিজ উৎসব যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে পারবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কেবল শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য নয়, বরং দেশে সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতিফলনও ঘটায়। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব একই সময় পড়ায় ছুটিকে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে, যাতে কোনো সম্প্রদায় বঞ্চিত না হয়।
একটানা এই ছুটিকে ঘিরে শিক্ষার্থীরা যেমন পরিবার-পরিজন নিয়ে উৎসব পালন করতে পারবে, তেমনি অনেক শিক্ষার্থী ছুটিকে কাজে লাগিয়ে ভ্রমণ বা ব্যক্তিগত প্রস্তুতির সুযোগও পাবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ বিরতির কারণে পড়াশোনায় যেন বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকে নজর দিতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ