
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির গুঞ্জন ও চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অর্থ মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, এনবিআর বিলুপ্তির কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং, বিদ্যমান কাঠামোকে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী করতে একাধিক প্রশাসনিক সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাস্তবায়ন ঘিরে এনবিআরের কর্মকর্তাদের অসন্তোষ ও কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (২২ মে) অর্থ মন্ত্রণালয় এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার কার্যালয়ে একাধিক দফা গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে ২০ মে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে রাজস্ব নীতি সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাবৃন্দ এবং এনবিআরের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে প্রায় এক ঘণ্টা দীর্ঘ আলোচনা হয়। এই আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাদেশ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা মতামত প্রদান করেন।
উক্ত বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা ঘোষণা করেন, এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে পুনরায় আলোচনা করে অধ্যাদেশে যেসব দিক সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে, সেগুলো সংশোধন করে বাস্তবায়ন করা হবে। অর্থাৎ, সরকারের পক্ষ থেকে কোনও একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেই, বরং একটি অংশগ্রহণমূলক ও বাস্তবভিত্তিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজস্ব প্রশাসনকে আরও দক্ষ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্য রয়েছে।
তবুও আলোচনার পরপরই এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে অসহযোগ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক এবং অনভিপ্রেত হিসেবে উল্লেখ করেছে মন্ত্রণালয়। কারণ, আলোচনার মাধ্যমে যখন সব পক্ষের মতামত শোনা হয়েছে এবং সংশোধনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, তখন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কোনও যৌক্তিক ভিত্তি নেই।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের আগে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি নতুন বিভাগ গঠন, প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি, সচিব কমিটির অনুমোদন গ্রহণ, ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ পুনর্বিন্যাস এবং বর্তমান প্রাসঙ্গিক আইনে সংশোধনী আনা। এসব কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ এবং প্রক্রিয়াভিত্তিক, যেখানে আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজা হবে। অতএব, এনবিআর বিলুপ্তির প্রশ্নই ওঠে না, বরং প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম আগের মতোই চালু থাকবে এবং রাজস্ব প্রশাসনের মূল স্তম্ভ হিসেবে এনবিআর তার অবস্থানে বহাল থাকবে। এনবিআরের অধীনে কর্মরত কাস্টমস ও কর ক্যাডারের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পূর্বের দায়িত্ব ও অবস্থানেই কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানানো হয়েছে।
এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। তাদের প্রশাসনিক কাঠামো পৃথকীকরণ করা হলেও, এতে কোনও পদ বা পদবির হ্রাস ঘটবে না। বরং, কর্মসংস্থান বাড়ানো, পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধি এবং দক্ষতাভিত্তিক মূল্যায়নের মতো উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অর্থবছরের শেষপ্রান্তে এসে বাজেট প্রণয়ন ও রাজস্ব আহরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিঘ্ন না ঘটাতে অর্থ মন্ত্রণালয় এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাসময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছে।
সরকার মনে করে, জাতীয় রাজস্ব প্রশাসন দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রধান ভিত্তি। তাই এই সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট জনবলের উন্নয়ন ও মর্যাদা রক্ষা করে, অংশগ্রহণমূলক ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন সংস্কারের মাধ্যমেই রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে সময়োপযোগী ও জনগণের আস্থার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ