
ছবি: সংগৃহীত
সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায়নি—এই মর্মে স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ছাড়া বাজারে কেউ একতরফাভাবে তেলের দাম বাড়ানোর অধিকার রাখে না। কেউ যদি এ ধরনের অননুমোদিত সিদ্ধান্ত নেয়, সরকার অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর পূর্বাচলে এক সেমিনারে অংশগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে বোতলজাত ও খোলা ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার খবরে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটেই উপদেষ্টা এ বক্তব্য দেন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, “কিছু ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে দাম পরিবর্তনের ঘোষণা দিচ্ছেন এবং সেটিকে সরকারের সিদ্ধান্ত হিসেবে প্রচার করছেন। এটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ও অনভিপ্রেত। সরকার এখনো তেলের দামের বিষয়ে কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নেয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা সরকার নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে, তবে এখন পর্যন্ত নতুন মূল্য নির্ধারণের কোনো সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশন নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষণ করে। আমরা জানি, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে দেশীয় বাজারে তার প্রভাব পড়ার কথা নয়। কোনো ব্যবসায়ী বা অ্যাসোসিয়েশন যদি সরকারের সঙ্গে সমন্বয় ছাড়া দাম পরিবর্তন করে, সেটি স্পষ্টভাবে নিয়মবহির্ভূত।”
এর আগে, সোমবার (১৩ অক্টোবর) বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিভিওআরবিএমএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবি করে যে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এই দাম ১৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে।
সংস্থাটির ঘোষণায় বলা হয়, নতুন দামে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের মূল্য ৬ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৮ টাকা—যা এখন লিটারপ্রতি ১৭৭ টাকা। একইভাবে পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ২৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি খোলা পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৩ টাকায়।
এই ঘোষণার পর সাধারণ মানুষ ও বাজার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ধারণা জন্মে যে সরকারই নতুন করে তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন মঙ্গলবার স্পষ্ট করে জানান, “এটি সরকারের নির্দেশে হয়নি, বরং ব্যবসায়ী সংগঠনের একতরফা সিদ্ধান্ত।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষা করা। মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আমরা প্রতিদিন বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো ব্যবসায়ী যদি স্বেচ্ছায় দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের ক্ষতির মুখে ফেলে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।”
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, সরকার এরই মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখাগুলোকে মাঠপর্যায়ে তদারকি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে। তিনি বলেন, “যেখানে-সেখানে যদি দেখা যায় দাম বাড়ানো হয়েছে অথচ কোনো অনুমোদন নেই, সেসব ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাজারে কৃত্রিম সংকট বা অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা।”
তিনি আরও জানান, সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুযায়ী, ভোজ্যতেল একটি ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য’, যার দামের ওপর জনজীবনের ব্যয় সরাসরি নির্ভর করে। তাই সরকার বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে নিয়মিতভাবে রিফাইনারি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করছে।
উপদেষ্টা শেষে সাধারণ জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেন, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সরকার বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সরকারি কোনো ঘোষণা এখনো হয়নি, এবং সরকারের অনুমোদন ছাড়া কেউ তা কার্যকর করতে পারবে না।”
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় শিগগিরই রিফাইনারি মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। প্রয়োজন হলে বিভিওআরবিএমএ-এর ঘোষণার বৈধতা নিয়েও তদন্ত হতে পারে।
এদিকে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুচরা পর্যায়ে ইতোমধ্যে কিছু দোকানে নতুন দামে তেল বিক্রি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে সরকার বলছে, এমন কার্যক্রম অননুমোদিত, এবং দ্রুতই বাজারে নজরদারি বাড়ানো হবে।
মোট কথা, সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা স্পষ্ট—ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর কোনো নতুন সরকারি সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি, এবং যে কোনো ধরনের অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ