
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বহুল প্রত্যাশিত মহার্ঘ ভাতা চালুর বিষয়টি এবার বাস্তবায়নের দিকেই এগোচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২০ মে, মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “মহার্ঘ ভাতা চালুর বিষয়টি এখন সক্রিয়ভাবে বিবেচনার মধ্যে আছে। সম্ভাবনাও মোটামুটি বলা যায় ভালোই রয়েছে। তবে কতদিনের মধ্যে দিতে পারব এবং কত শতাংশ দেওয়া সম্ভব হবে, সে বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই কমিটি বিষয়টি বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে সুপারিশ দেবে।”
বর্তমানে দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন দামে দিশেহারা। বিশেষ করে মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর এই চাপ সবচেয়ে বেশি পড়ছে। এ অবস্থায় সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছিলেন যে, তাদের বেতন কাঠামো সংশোধন না হোক, অন্তত মূল্যস্ফীতির প্রভাবে জীবিকা পরিচালনা সহজ করতে যেন একটি মহার্ঘ ভাতা চালু করা হয়। এই দাবি দীর্ঘ সময় ধরে উপেক্ষিত থাকলেও, নতুন করে এটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বস্ত করলেন বর্তমান অর্থ উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, মহার্ঘ ভাতার পরিমাণ, শুরু করার সময়সীমা, এবং এটি কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে—এই বিষয়গুলো নিয়ে সুস্পষ্ট রূপরেখা তৈরির জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “এই কমিটি অচিরেই তাদের কাজ শুরু করবে। তারা দেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতা, রাজস্ব আহরণ, সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ, ও ভাতা প্রদানের টেকসইতা—সব দিক বিবেচনায় নিয়ে একটি বাস্তবসম্মত প্রস্তাবনা দেবে।”
অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, “সরাসরি ঘোষণা দিতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, একদিকে আমাদের সীমিত বাজেট, অন্যদিকে কর্মচারীদের দুর্ভোগ—এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে।”
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আসন্ন জাতীয় বাজেট ঘোষণার আগেই যদি এই মহার্ঘ ভাতা চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়, তবে তা সরকারিকর্মীদের মধ্যে স্বস্তির হাওয়া বয়ে আনবে। আগামী অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনায় এটি যুক্ত হলে পুরো প্রক্রিয়া অনেকটা সহজ হবে। যদিও সরকারের পক্ষে এমন একটি বড় অঙ্কের অতিরিক্ত ব্যয় গ্রহণযোগ্য হবে কিনা—তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সরকারি একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মহার্ঘ ভাতা চালুর ক্ষেত্রে ১০-২০ শতাংশ হারে প্রাথমিক সুপারিশ এসেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে রাজস্ব পরিস্থিতি এবং বাজেট কাঠামোর আলোকে।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মূল্যস্ফীতি এবং আমদানি নির্ভরতা। ডলার সংকট, বৈদেশিক ঋণের চাপ, এবং রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকারকে ব্যয়ের ক্ষেত্রে খুব হিসাবি হতে হচ্ছে। এর মধ্যেই সরকার যদি মহার্ঘ ভাতা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তা একদিকে যেমন সরকারি কর্মচারীদের আর্থিক স্বস্তি দেবে, তেমনি অন্যদিকে রাজস্ব ব্যয় বাড়িয়ে তুলবে।
তবে অর্থ উপদেষ্টার মতে, “এটি শুধু ব্যয় নয়, বরং কর্মচারীদের মনোবল ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা উচিত।”
সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যেই মহার্ঘ ভাতা চালুর সম্ভাবনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একাধিক সংগঠন জানিয়েছে, এটি শুধু তাদের ন্যায্য দাবির প্রতিফলন নয়, বরং সামগ্রিকভাবে জনসেবার মানোন্নয়নেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারা আশা করছেন, খুব দ্রুত সরকার এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সালের পর থেকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বড় কোনো বেতন কাঠামো সংশোধন হয়নি। মাঝেমধ্যে কিছু খাতভিত্তিক ভাতা সামান্য পরিবর্তন হলেও সামগ্রিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির তুলনায় বাস্তব আয় হ্রাস পেয়েছে অনেকটাই। এবার যদি মহার্ঘ ভাতা চালু হয়, তবে তা হবে সরকারের পক্ষ থেকে কর্মচারীদের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি ইতিবাচক বার্তা।
মহার্ঘ ভাতা বিষয়টি এখন আর নিছক গুঞ্জন নয়, বরং সরকার এটি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেছে। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের স্পষ্ট বক্তব্যে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, কবে নাগাদ এই মহার্ঘ ভাতা বাস্তবে রূপ পায় এবং কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা কর্মচারীদের হাতে পৌঁছায়। অর্থনৈতিক সংকটের মাঝেও যদি সরকার এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে তা একদিকে সরকারি খাতে সেবা মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে, অন্যদিকে জনগণের আস্থাও বাড়াবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ