
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অব্যাহত ভারী বর্ষণ এবং উজানের পাহাড়ি ঢলের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের চারটি জেলায় নতুন করে আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়াবিদরা। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা এবং সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা। এই চার জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে ইতিমধ্যেই পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে, যার ফলে কয়েকটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে এবং অনেক এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বেসরকারি আবহাওয়া বিশ্লেষক সংস্থা আবহাওয়া ডট কম-এর প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যে টানা ভারী বর্ষণের ফলে বিশাল মাত্রার পানি বাংলাদেশ অভিমুখে নামতে শুরু করেছে। এই পানি প্রধানত আসছে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলে। একইসাথে দেশের অভ্যন্তরেও গত কয়েকদিন ধরে টানা অথবা থেমে থেমে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ চলছে, যার ফলে নদীগুলোর পানি ধারণক্ষমতার বাইরে যেতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, “আজ মঙ্গলবার থেকে আগামীকাল বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে এই অঞ্চলের উপর দিয়ে একনাগাড়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অতিক্রমের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে পাহাড়ি ঢল আরও বেড়ে যেতে পারে এবং দ্রুত বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।” তিনি আরও জানান, বিমান বাহিনীর রাডার চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে একের পর এক বজ্রসহ ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেরপুর জেলার চেল্লাখালী নদীর পানি মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এটি একটি বিপজ্জনক মাত্রা, কারণ এর আগে গত সোমবার রাত ১০টায় এই নদীর পানি ছিল বিপৎসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ওপরে। মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে পানি বেড়েছে ৬৭ সেন্টিমিটার, যা এই অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার পূর্বাভাস বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ ভোর থেকে শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় টানা বৃষ্টি চলছে। পাহাড়ি ঢল ও স্থানীয় বৃষ্টির ফলে নদীগুলোর পানি আরও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিশেষ করে শেরপুরের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে প্রবাহমান নদ-নদীগুলোর পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে।
অন্যদিকে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত পোস্টে উল্লেখ করেছেন, “আজ সকাল সাড়ে ১১টার পর থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত রংপুর, ময়মনিসংহ ও সিলেট বিভাগের জেলাগুলোর উপর দিয়ে একের পর এক বজ্রবৃষ্টি অতিক্রম করতে পারে। এতে করে নদীর পানি হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।”
এদিকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পরিস্থিতিও নাজুক হয়ে উঠতে পারে। রাডার চিত্রে দেখা যাচ্ছে, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার উপরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। যদিও এখনো এই অঞ্চলে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই, তবে বর্ষণ যদি একইভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দ্রুত পরিস্থিতির উন্নয়ন না ঘটলে স্থানীয় প্রশাসনকে জরুরি প্রস্তুতি নিতে হবে। পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়বে এবং হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হতে পারেন। সেক্ষেত্রে খাদ্য, আশ্রয় ও স্বাস্থ্যসেবাসহ জরুরি ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা অপরিহার্য হয়ে পড়বে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এর আগে এমনভাবে পানি বাড়তে শুরু করলে খুব দ্রুত বন্যা দেখা দিয়েছিল এবং অনেক মানুষকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হয়েছিল। এবারও তেমন পরিস্থিতির আশঙ্কায় অনেকে ঘর থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন এবং প্রস্তুতি নিচ্ছেন সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলার।
সার্বিকভাবে বলা যায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এক নতুন বন্যা পরিস্থিতির অবতারণা ঘটতে যাচ্ছে। সঠিক সময়ের আগাম পূর্বাভাস এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি থাকলে হয়তো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হবে। তবে এখনই সময় স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ত্রাণ কার্যক্রম সংশ্লিষ্টদের সমন্বিতভাবে সক্রিয় হওয়ার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ