
ছবি: সংগৃহীত
দেশে অনলাইনে জুয়া খেলার সকল পথ চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। সাইবার নিরাপত্তার নামে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রুখতে সরকার নতুন করে একটি শক্তিশালী আইন প্রণয়নের পথে এগিয়েছে, যার আওতায় অনলাইনে পরিচালিত সব ধরনের জুয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আইনটি বর্তমানে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং চলতি সপ্তাহেই এটি চূড়ান্ত আকারে প্রকাশিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও আইনবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।
মঙ্গলবার (৬ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান তিনি। এই ব্রিফিংয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “অনলাইনে জুয়া একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের তরুণ প্রজন্ম এতে আসক্ত হয়ে পড়ছে, ধ্বংস হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও অর্থনীতি। আমরা এবার সেটি কঠোরভাবে রুখতে আইনত নিষিদ্ধ করছি।”
তিনি আরও জানান, নতুন প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন-এ এমন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন করা হয়েছে, যা আগের আইনে ছিল না। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হলো—আগের ‘সাইবার সিকিউরিটি আইন’-এর বিতর্কিত ৯টি ধারা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত হাজার হাজার মামলা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাইবার অপরাধে ‘রাজনৈতিক মামলা’র অবসান:
ব্রিফিংয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, “বিগত সরকারের আমলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে মনগড়া রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হতো। বিশেষ করে জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা বা রাষ্ট্রীয় প্রতীক অবমাননার অভিযোগে মামলা দায়েরের যে ধারা ছিল, তা সরকারের সমালোচকদের দমনে অপব্যবহার হতো।” তিনি স্পষ্ট করে জানান, এ ধারা ও এর মতো আরও ৮টি ধারা বাতিল করা হয়েছে, যেগুলোর আওতায় ৯৫ শতাংশ মামলা দায়ের হয়েছিল। এই মামলাগুলো এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে।
অন্যান্য আইনেরও অনুমোদন:
বৈঠকে শুধু সাইবার নিরাপত্তা আইন নয়, আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনের খসড়াও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, ‘সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন’, যা স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনিক কাঠামোর আধুনিকায়নের জন্য প্রাসঙ্গিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দ্বিতীয়ত, ‘সিভিল প্রসিডিউর কোড (সিপিসি)’ সংশোধন করে এমন একটি রূপ দেওয়া হয়েছে যাতে সিভিল মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পথ তৈরি হয়।
আইন উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে দেশের আদালতগুলোতে অসংখ্য সিভিল মামলা বছরের পর বছর ঝুলে থাকে। এতে বিচারপ্রার্থীরা যেমন হয়রানির শিকার হন, তেমনি বিচার বিভাগের ওপর বাড়ে চাপ। নতুন সিপিসি আইন বাস্তবায়ন হলে মামলা নিষ্পত্তির গতি বাড়বে এবং বিচারব্যবস্থা আরও কার্যকর হবে।”
জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতির দিকনির্দেশনা:
সরকারের এই উদ্যোগকে বিশ্লেষকরা দেখছেন দেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে। অনলাইন জুয়া নিষিদ্ধ করা মানে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি ঠেকানো নয়, বরং এটি তরুণ সমাজকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করারও একটি প্রয়াস। একই সঙ্গে রাজনৈতিক মামলার অজুহাতে হয়রানি বন্ধের এই উদ্যোগ গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য একটি বড় স্বস্তির বার্তা বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইনের খসড়া চূড়ান্ত হলে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে এবং আইনে পরিণত হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ