ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন উভয়ই নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, যথাযথ সমন্বয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিশ্চিত করতে পারলে নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ রাখা সম্ভব হবে।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে পটুয়াখালীর সমুদ্র উপকূলীয় শহর কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত এক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম এই কথা বলেন। কর্মশালার শিরোনাম ছিল—‘নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চ্যালেঞ্জসমূহ নিরূপণ ও উত্তরণের উপায়’।
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “সরকার ও নির্বাচন কমিশন উভয়ই চায় একটি অংশগ্রহণমূলক, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আমরা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই, যেন ভোটকেন্দ্রে মানুষ নিরাপদে গিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। এ জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বিত প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “নির্বাচন আয়োজন একটি বড় জাতীয় দায়িত্ব। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার এখন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা। এ কারণেই নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ, সচেতনতামূলক কর্মশালা এবং মাঠপর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক সভা আয়োজন করা হচ্ছে।”
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম আরও বলেন, “বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের প্রচারণা, গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এসব নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেবে, সেই অনুযায়ীই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কোনো গুজব বা প্রোপাগান্ডা নির্বাচনী প্রস্তুতিকে প্রভাবিত করতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে জনমনে যে শঙ্কা বা বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে, তা মূলত অপপ্রচার। প্রকৃত সত্য হলো, নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছে এবং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।”
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, “আমাদের ওপর দেশের ভালো-মন্দ অনেকটাই নির্ভর করছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের নেতৃত্বে দায়িত্বশীলভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে হবে। যদি প্রতিটি কর্মকর্তা তার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন, তাহলে কোনো জেলা বা উপজেলায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে বাধা থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, “ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব শুধু ভোটের দিনেই সীমাবদ্ধ নয়। ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতি, ভোটগ্রহণ সামগ্রী গ্রহণ, ভোটের ফলাফল পাঠানো—প্রতিটি ধাপে সততা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা জরুরি। ছোটখাটো ত্রুটি বা অবহেলা বড় ধরনের সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই প্রতিটি ধাপেই সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন।”
বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অপু সরোয়ার, এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপপ্রধান মুহাম্মদ মোস্তফা হাসান।
দিনব্যাপী এই কর্মশালায় পটুয়াখালী জেলার আট উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রায় ৬০ জন কর্মকর্তা অংশ নেন।
কর্মশালায় কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে ভোটগ্রহণের সময় সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ, নিরাপত্তা ঝুঁকি, প্রার্থীদের আচরণবিধি বাস্তবায়ন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের প্রস্তুতি, এবং প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারদের দায়িত্ব পালনের কৌশল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “ভোটের দিন যেসব কর্মকর্তা মাঠে কাজ করবেন, তাদের প্রত্যেকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ যেন স্বচ্ছ ও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যেই মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনা, সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যাতে কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই ভোটগ্রহণ করা যায়।
ইসি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য ভোটার তালিকা হালনাগাদ, কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটকর্মী নিয়োগ, নিরাপত্তা বাহিনীর মোতায়েন পরিকল্পনা এবং লজিস্টিক সহায়তা কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে।
তিনি বলেন, “আমরা নির্বাচনকে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে আয়োজন করতে চাই। এজন্য নির্বাচনের আগে থেকেই মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, ভোটকেন্দ্র প্রস্তুতি এবং জনগণকে সচেতন করার কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো—প্রতিটি ভোট যেন সঠিকভাবে গণনা হয় এবং জনগণের ইচ্ছাই যেন সংসদ গঠনের ভিত্তি হয়।”
নির্বাচন কমিশনের এই কর্মশালা মূলত মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রস্তুতি পর্যালোচনার অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হলেও, এটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দিকনির্দেশনাও বহন করে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের যে ইঙ্গিত ইসি আনোয়ারুল ইসলাম দিয়েছেন, তা কার্যত নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার প্রাকধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই সময়সূচি বাস্তবায়িত হয়, তবে নভেম্বরেই আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। আর সে অনুযায়ী ডিসেম্বর-জানুয়ারির মধ্যে মনোনয়ন, যাচাই-বাছাই ও প্রচারণার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়ে যাবে।
সব মিলিয়ে, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বক্তব্যে এখন স্পষ্ট—ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এবং সে লক্ষ্যে প্রশাসন ও মাঠপর্যায়ের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই গতি পেয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



