
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ভয়াবহ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে সাফ জানানো হয়েছে, নয়াদিল্লি যদি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো রকম হামলার সাহস দেখায় কিংবা পানিচুক্তি লঙ্ঘন করে দেশটির পানির প্রবাহ ব্যাহত করে, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে জবাব দেওয়া হবে। এমন হুমকি দিয়েছেন রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ খালিদ জামালি। শনিবার রুশ সম্প্রচারমাধ্যম আরটি (RT)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত জামালি দাবি করেন, পাকিস্তানের কাছে এমন কিছু বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যা বলছে, ভারত শিগগিরই পাকিস্তানে একটি সীমিত পরিসরের সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। তিনি বলেন, "আমাদের হাতে এমন কিছু গোপন ও ফাঁস হওয়া নথি রয়েছে যেখানে পাকিস্তানের নির্দিষ্ট কিছু এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করে সামরিক আক্রমণের পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এটি আমাদের আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে যে, ভারত হয়তো শিগগিরই সীমান্ত পেরিয়ে সরাসরি হামলা চালাবে।"
এই প্রসঙ্গে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “যদি ভারত এমন কোনো মারাত্মক ভুল করে বসে, তাহলে পাকিস্তান তার সামরিক শক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করবে—সেটি প্রচলিত অস্ত্রই হোক বা পারমাণবিক অস্ত্র। আমাদের অস্ত্রাগার এই ধরনের যেকোনো হুমকির উপযুক্ত জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।”
পাকিস্তানের শীর্ষ কূটনীতিকের এই হুমকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এমন সময় এই মন্তব্য এলো, যখন কাশ্মীর ইস্যু ঘিরে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটাই ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোনও শীর্ষ কূটনীতিকের দেওয়া সবচেয়ে সরাসরি পারমাণবিক হুমকি।
রাষ্ট্রদূত জামালি আরও বলেন, ভারত ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিচুক্তি (Indus Waters Treaty) স্থগিত করেছে, যা পাকিস্তানের দৃষ্টিতে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা। “যদি ভারত একতরফাভাবে পানির প্রবাহ থামিয়ে দেয় বা অন্যদিকে সরিয়ে দেয়, তাহলে সেটি যুদ্ধের সমতুল্য হবে। ইসলামাবাদ এমন পদক্ষেপকে শুধু অসহিষ্ণুতা নয়, সরাসরি আগ্রাসন হিসেবে দেখবে এবং আমাদের প্রতিক্রিয়াও হবে চরম ও সর্বাত্মক।”
এর আগে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন দলের সিনিয়র নেতা ও সাবেক মন্ত্রী হানিফ আব্বাসি একটি জনসভায় বলেন, "পাকিস্তানের গজনবী, শাহীন ও ঘোরি সিরিজের ১৩০টি পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুত আছে—সবই ভারতের দিকে তাক করা। ভারত যদি উসকানি দেয়, আমরা দেরি করব না।"
এদিকে, দক্ষিণ এশিয়ায় পারমাণবিক উত্তেজনার আবহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জাতীয় নিরাপত্তা কাঠামোর শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করছেন। কাশ্মীর হামলার পর প্রথমে সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদি, পরে নৌবাহিনীর প্রধান এবং সর্বশেষ রোববার বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিং-এর সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। যদিও এই বৈঠকগুলোর আনুষ্ঠানিক বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি, তবুও সূত্রমতে, এসব আলোচনায় সম্ভাব্য প্রতিরক্ষা জবাব এবং সীমান্ত পরিস্থিতির মূল্যায়নই ছিল মূল বিষয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই মুহূর্তে পাকিস্তানের হুঁশিয়ারি কূটনৈতিক চাপের কৌশল হলেও এটিকে অবহেলা করা যাবে না। কারণ দুই দেশই পরমাণু শক্তিধর এবং সীমান্ত উত্তেজনা অতীতেও বড় যুদ্ধের দিকে গড়িয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান কিথ সেলফ বলেছেন, “ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যদি যুদ্ধ শুরু হয়, বিশেষত উভয় দেশ যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে যায়, তাহলে সেই সংঘাত আর থামানো যাবে না। একবার এই ধরনের যুদ্ধ শুরু হলে তা বিশ্বশান্তির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”
আরেক মার্কিন কংগ্রেসম্যান জ্যাক বার্গম্যান বলেন, "এই ধরনের বিপর্যয় রোধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত একই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন অংশীদারদের সঙ্গে মিলে কাজ করা। দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনা সীমিত রাখতে এখনই কূটনৈতিক চাপ ও মধ্যস্থতা বাড়ানো জরুরি।"
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি নিয়ে বিরোধ, সীমান্তে হামলা ও কাশ্মীর ইস্যু দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ককে বিষিয়ে তুলেছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে বেশি উদ্বেগজনক, কারণ দুই দেশই সরাসরি যুদ্ধ বা প্রতিশোধের প্রস্তুতির কথা খোলাখুলি বলছে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় এই উত্তেজনা ক্রমেই ভয়ানক দিকে মোড় নিতে পারে বলেই আশঙ্কা বাড়ছে। ভারত কিংবা পাকিস্তান, উভয় পক্ষেরই এখন দায়িত্বশীল আচরণ করা ও উত্তেজনা প্রশমনে ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন বলে মত বিশ্লেষকদের।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ভারত সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের হুমকির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, এই হুঁশিয়ারির বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে এবং শিগগিরই আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ