ছবি: সংগৃহীত
ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রোববার সন্ধ্যায় পরিচালিত এই নজিরবিহীন হামলায় অন্তত ছয়জন আহত হন এবং বিমান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুতি বিদ্রোহী এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির বরাতে জানা গেছে, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে এই হামলায় ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রটি ইয়েমেন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। হুতিদের তরফ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, এই হামলায় তারা ‘হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’ ব্যবহার করেছে এবং এটি সম্পূর্ণ সামরিক লক্ষ্যবস্তু হিসেবে বাছাই করা হয়েছিল। এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রতিবাদ এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামলা প্রতিহত করতে তারা একাধিকবার চেষ্টা করেছে। তবে তাদের কথায়, প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে মার্কিন ‘থাড’ (THAAD) এবং ইসরায়েলি ‘অ্যারো’ (Arrow) প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা—দুটিই সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি এসে বিস্ফোরিত হয়, যেখানে বড়সড় গর্ত সৃষ্টি হয়। এ সময়ের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তারা এই গর্তের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন এবং তাদের পেছনে নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার দৃশ্যমান। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই প্রথমবার কোনো ক্ষেপণাস্ত্র এতটা ঘনিষ্ঠভাবে রানওয়ে ও টার্মিনাল এলাকায় আঘাত হানল।
এই হামলার পরপরই এক ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আমরা অতীতেও হুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, ভবিষ্যতেও নেব। প্রতিশোধ একবারে নেওয়া হবে না, বরং একাধিক ধাপে নেওয়া হবে।” পরে সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি আরও বলেন, “আমরা নিজেদের পছন্দের সময় ও স্থানে জবাব দেব। ইরান ও হুতিদের প্রতি আমাদের বার্তা হবে পরিষ্কার ও কার্যকর।”
এরপর সাইপ্রাসের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোদুলিদেসের সঙ্গে বৈঠকে নেতানিয়াহু আরও বলেন, “আজ শুধু আমরা নয়, গোটা বিশ্ব হুতিদের হুমকির মুখে রয়েছে। তারা ইরানের নির্দেশনায় এবং তার সামরিক সহায়তায় এসব হামলা চালায়। আমরা এই হামলার পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী ইরানকে সতর্ক করব এবং তাদের কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। এই বার্তা আমরা খুব স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেব।”
হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে হুতি বিদ্রোহীদের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, “এখন থেকে হুতিদের চালানো প্রতিটি গুলিকে ইরানের অস্ত্র থেকে ছোড়া গুলি হিসেবে গণ্য করা হবে। ইরানকে এর জবাবদিহি করতে হবে এবং পরিণাম হবে ভয়াবহ।”
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের প্রশংসা করে নেতানিয়াহু বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একেবারে সঠিক কথা বলেছেন। হুতিদের হামলা মানেই ইরানের হামলা। বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হামলার উপযুক্ত জবাব পাবে হুতিরা এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকও।”
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা হামলার দায় স্বীকার করে বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের জবাবেই এই সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তারা দাবি করেছে, ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরকে লক্ষ্য করে সফলভাবে আঘাত হেনেছে এবং ভবিষ্যতেও এরকম আরও হামলার হুমকি রয়েছে যদি ইসরায়েল ফিলিস্তিনে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখে।
হামলার পর ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা জরুরি বৈঠকে বসে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। যদিও বিমান চলাচল কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল, কর্তৃপক্ষ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে সীমিতভাবে ফ্লাইট চালু করে।
বিশ্লেষকরা এই হামলাকে ‘বিরল ও ভয়াবহ এক নজির’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাদের মতে, ইসরায়েলের কড়া প্রতিরক্ষা বেষ্টনীকে এভাবে ফাঁকি দিয়ে মূল বিমানবন্দরে সফল হামলা ইসরায়েলি নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর বড় প্রশ্ন তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই হামলা এবং নেতানিয়াহুর পাল্টা হুমকি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে। ইতোমধ্যে গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেনসহ ইরানঘনিষ্ঠ শক্তিগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নানা রকম আক্রমণাত্মক তৎপরতায় যুক্ত হয়েছে। বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের মতো স্পর্শকাতর স্থাপনায় সরাসরি হামলা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে বলেই মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
এখন দৃষ্টি সবার ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ এবং সেই প্রতিশোধমূলক হামলা কখন, কোথায় ও কীভাবে বাস্তবায়িত হয়, তার দিকেই।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



